Skip to main content

তরিকতের দস্যু -২


আপনার কাছে যদি কোনও সাধনালব্ধ ক্ষমতা থাকে,আর যদি সে ক্ষমতা বলে কারও কোনও ক্ষতি করেন ; তবে জেনে রাখবেন সে ক্ষতি চারগুণ হয়ে আপনার কাছেই ফিরে আসতে বাধ্য।
প্রতিটি মানুষেরর ভেতর তার নিজ জীবনের ক্রিয়েটর উপস্থিত। তাই তার জীবন তাকেই গড়তে দিন। সেখানে আপনার উপস্থিতি শোভা পায়না।
গত পর্বে দস্যুদের পরিচয় দেয়ার চেষ্টা করেছি। এ পর্বে গুরুবাদের মুখোশের আড়ালে অর্থলোভী গুরুদের একটি ক্ষমতা সম্পর্কে তুলে ধরার চেষ্টা করব।
ধ্যান সাধনার পথে একটা সময় যখন মোটামুটি একটা পর্যায়ে যায় কিছু মানুষ নিজেকে বিকিয়ে দেয় এমন কয়েকটা ক্ষেত্রই আছে। যেমন :
১) অর্থের কাছে বিকানো।
২) যৌণতায় অষ্টপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাওয়া।
৩) ক্ষমতার অপব্যাবহার
৪)নিজের ভেতর ষড়রিপুর ইগো তৈরি হওয়া। ইত্যাদি।
এর মধ্যে অর্থ সকল অনর্থের মূল যেমন বলা হয় তেমনই হয় কিছু গুরু/পীরদের দ্বারা। সে কারনে যতটুকু ক্ষমতা অর্জন করেছে তার অপব্যাবহার করা শুরু করে। প্রত্যেক পীরই তার স্বীয় গুরুর কাছ থেকে বীজমন্ত্র বা আধ্যাত্মিক একটা ক্ষমতা পেয়ে থাকে যার দ্বারা পীরগিরি করে বা মানুষের উপকার করে থাকে। সে ক্ষমতার মধ্যে সম্মোহনী ক্ষমতাটা মারাত্মক একটা ক্ষমতা। কিছু গুরু সে ক্ষমতার ভাল ব্যাবহার করে; বেশীরভাগ করে অপব্যাবহার।
যেমন কিছু গুরু তার শিষ্যদের মঙ্গল না করে কুফরীর মাধ্যমে শিষ্যের ভালটাকে আটকে রাখে। মন্দটাকে শিষ্যের মধ্যে নিক্ষেপ করে যার কারনে শিষ্যের বিপদ ছাড়েনা,অসুস্থতা দূর হয়না।এগুলো করার কারন হলো আপনি বার বার তার কাছে যাবেন এবং যতবার যাবেন ততবারই হাতে কিছু ধরিয়ে দিয়ে আসবেন এটাই তার লাভ।
একবার এক ভক্ত তার গুরুকে ফোন দিল বলল, বাবা আমার মেয়ের পা টা কেটে গেছে তিনটা সেলাই পড়ছে। তৎক্ষণাৎ সেখানে তার ভক্তদের সামনে বলতেছে, সবেতো পা কাটছে আরও কতকিছু হবে। সবেতো শুরু।
আরেক ভক্ত বলে, বাবা আমার মেয়ের পরীক্ষা তার জন্য একটু দোয়া করুন। তখন বলে মেয়েতো পাশ করবেনা দেখো কি হয়।
দেখুন একজন পিতামাতার কাছে তার সন্তান কত দামী অথচ তারই কাছে বলছে পাশ করবেনা। পা কাটছে আরও কতকিছু হবে। ধরুন পিতামাতা ভালনা কিন্তু সে বাচ্চাগুলো কি অন্যায় করেছে? এগুলো তাঁরই সৃষ্ট বিপদ আপদ একটার পর একটা সাজানো। কারন কুফুরী বিদ্যায় সে পারদর্শী আর লোভে সে অন্ধ।
এমন অসংখ্য গুরু পীর বর্তমানে উপস্থিত। গুরুতো সে যার পকেটে পয়সা না থাকলে গাড়ীভাড়াটা দিয়ে দেবে।এমনও গুরু আছে টাকার স্তূপের উপর বসে থাকে কিন্তু তার দৃষ্টি সে দিকে পড়েনা। এর বিপরীতে এমনও আছে মাসিক চাঁদাও দিতে হয় প্রতিমাসে।
তাই গুরু নির্বাচনে সতর্ক থাকবেন সবাই। হুট করেই সিদ্ধান্ত নিবেন না। এরা গুরু নয় এরা দস্যু। তরিকতের দস্যু এরা।
যখন এ রকম দেখবেন যে, এতো বছর থাকার পরও তার সাথে কিছু পাচ্ছেন না। সাথে সাথেই তাদের ত্যাগ করুন।তার এমন কথায় ভয় পাবেন না যে, আমার দরবার ছেড়ে কোথায় গিয়ে শান্তি পাও দেখব।
এদের জন্য আমল হল মোরাকাবায় অতিন্দ্রীয় রাজ্যে চার কূল পড়া।

Comments

Popular posts from this blog

গুরু শিষ্য

প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যাঁর নিকট থেকে নিজের মনের অন্ধকার দূর করে আলোকিত হওয়ার জন্য ভজন বিষয়ে যা কিছু শিক্ষা করা যায় তিনিই গুরু।                                          "গুরু গোবিন্দ দোউ খড়ে,কিনকে লাগুঁ পায়,                                           বলিহারী গুরুদেব কী,গোবিন্দ দিয়ো বাতায়।।                          বিখ্যাত এ দোহাটি দিয়ে শুরু করলাম আমার গুরুশিষ্য লেখাটির প্রথম পর্ব। গুরুর চমৎকারিত্ব তখনই, যখন তিনি গোবিন্দকে পরিচিত করিয়েছেন,তাঁকে সামনে এনে দ...

সাধকের জীবন ও কর্ম (১১-২০ পর্ব)

সাধকের জীবন ও কর্ম (পর্ব:১১) -------------------------------------------- হযরত হাসান বছরী রহ: বলেন, আমি চারটি লোকের নিকট খুবই অপ্রস্তুত হয়েছি ও কিছুু শিক্ষা অর্জন করেছি।‎তাদের একজন হিজরা,দ্বিতীয়জন মাতাল, তৃতীয়জন বালক এবং চতুর্থজন একটি মহিলা। কীভাবে তা বলছি - (ক) একদা আমি একটি হিজরা (নপুংসক) লোকের পরিহিত কাপড় ধরে আকর্ষণ করায় ‎সে বলল,জনাব! আমার গোপন রহস্য বাইরে এখনো প্রকাশ পায়নি আপনি কি তা প্রকাশ করে দিতে চান? তৎক্ষণাত প্রভূর গোপন থাকার বিষয় আমার অন্তরকে প্রভাবিত করে। (খ)একদা একটি মদখোর মাতাল অবস্থায় হেলে-দুলে পথ চলছে। আমি তাকে বললাম, পথ পিচ্ছিল কিন্তু সাবধানে পা ফেল,নইলে আছাড় খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে জবাবে বলল,তুমি তোমার পা দুটোকো ঠিকভাবে ফেলে চলো। আমি তো মাতাল মানুষ, আছাড় খেলে কিন্তু ক্ষতি হবেনা। নিজের কাপড়ে ময়লা লাগলে তা ধুয়ে পরিষ্কার করে নেব। কিন্তু তুমি বড় এক আউলিয়া, তোমার শিষ্য - সাগরেদের অভাব নেই। তারা তোমার উপরেই ভর করে চলে। যদি চলার পথে তুমি কুপোকাত হও তবে তোমার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সবারই এক অবস্থা হবে। কাজেই আমার চাইতে পথ চলার ক্ষেত্রে তোমার দ্বায়িত্ব অনেক বেশী। (গ) একদা একট...

জমি সংক্রান্ত কিছু বিষয় জেনে নিন

খতিয়ানঃ মৌজা ভিত্তিক এক বা একাধিক ভূমি মালিকের ভূ-সম্পত্তির বিবরণ সহ যে ভূমি রেকর্ড জরিপকালে প্রস্ত্তত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। এতে ভূমধ্যাধিকারীর নাম ও প্রজার নাম, জ...