The Sound Of Silence
এটা এমন এক বিস্ময়কর ধ্বণি যা স্বয়ং প্রভূর পক্ষ থেকে হয়। কথিত আছে যে, সৃষ্টিকর্তা যখন রুহকে সৃষ্টি করলেন এবং আলমে আরওয়াহ তে প্রশ্ন করার জন্য মনস্থ করলেন তখন রুহ গুলি অতি চাঞ্চল্যতায় এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করতে শুরু করল। তখন তাদের একীভূত করার জন্য একটি ধ্বণির ব্যাবস্থা করলেন এবং সে ধ্বণিতে মুগ্ধ হয়ে রুহগুলি স্থীর হওয়া শুরু করল। এই ধ্বণিকেই অনাহাদ ধ্বণি বলা হয়ে থাকে। কেউ কেউ বলেন সাধকগণ সাধনার একটা স্তরে এই ধ্বণিই শুনতে পান। .কেউ এ ধ্বণি কে শ্রী কৃষ্ণের বাঁশী বলে থাকেন। সনাতন ধর্মে এটাকে "ওঁম "এর বেজে যাওয়া শব্দ মনে করেন। মুসলিমরা "হু " এর ধ্বণি।সবার মাঝেই এ ধ্বণি বাজে, কিন্তু আমরা ধরতে পারিনা।
চলুন একটু বিশ্লেষণে যাই।
কোন কিছুই সংস্পর্শ ছাড়া বাজেনা, হাতের সাথে হাত রেখে তালি হয়, ঘন্টা বাজাতেও দুটো জিনিসের প্রয়োজন হয়। শব্দ হলো এক ধরনের তরঙ্গ যা পদার্থের কম্পনের ফলে সৃষ্টি হয়।এটাকে বলে আহাদ।আর যা কোনরুপ পদার্থের কম্পন ছাড়া সৃষ্টি হয় তাকে বলে অনাহাদ।
বেশীরভাগ শব্দই আমরা বাইরে থেকে পেয়ে থাকি কিন্তু অনাহাদ ধ্বণি শুধুমাত্র আমাদের ভেতর থেকেই আসে। এটা স্তব্ধতার শব্দ The sound of silence. যখন নিজেকে স্থীর,শান্ত এবং সমস্ত ভাবনা হতে নিজেকে আলাদা করতে পারবেন তখনই এ ধ্বণি শোনা সম্ভব। অতিন্দ্রীয়রাজ্যের ধ্বণি এটা। যা সকল ইন্দ্রীয়কে থামিয়ে দিয়ে এ ধ্বণি শুনতে হয়। সাধক, মুণী, আউলিয়া কেরাম এ ধ্বণিরই ধ্যাণে বিভোর থাকেন অনেকটা কাল। এই বিভোরতাই আপনাকে সকল সমস্যার সমাধানের দিকে নিয়ে যাবে। কারন ইহা প্রভূর পক্ষ থেকে হয়।কিছুদিন পূর্বে NASA সৌরজগতের সাউন্ডের উপর একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে তাদের ওয়েবসাইটের চ্যানেলে ;অধিকাংশ লোকেরা বলছে অনেকটাই এরকম। যদিও আমি বলব এর চেয়েও অনেক মধুর সে ধ্বণি।আমাদের অবস্থা এরকম যে অামরা ভালমত না জেনে ধ্যাণ সাধনার প্রচার করি,কিতাব থেকে পড়ে ইউটিউবে ভিডিও বানিয়ে আপলোড করি। আমরা যদি একটু নিজের জীবনে কাজে লাগিয়ে সে প্রচার করতাম তাহলে মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়তো না। আমরাও কিছু পেলে লুফে নেই অতি সহজেই ;কাজ হোক বা না হোক। জেনে রাখবেন কিতাবে সব থাকেনা,থাকলেও বিস্তারিত না। তাদের অবস্থা সেই সংবাদের মত যা ঘটনা একটা প্রচার করে আরেকটা।ফেসবুকে অটো লাইকের ছড়াছড়ি দেখে আমরা যেন হুমড়ি খেয়ে না পড়ি সে দিকটা খেয়াল রাখার জন্য অনুরোধ থাকবে।
৩ টি উপায় ছাড়া ৪র্থ কোনও উপায় নেই শোনার। আপনিও শুনতে পারবেন সে ধ্বণি।সাধনা চালিয়ে যান। নির্জনতায় সাধনা ছাড়াও একটু ধ্যাণে বসলে আপনিও শুনতে পারবেন। তবে কেউ অল্প সময় কেউ অধিক সময়। কেউ এ মোরাকাবায় ধ্বণি শুনতে শুনতে ৪/৫ দিন চলে যায় খবরও থাকেনা।
পদ্ধতি এবং উপকার
---------------------------------
প্রথম পর্বে বলেছিলাম অনাহাদ ধ্বণি কি। আজ এই ধ্বণির পদ্ধতি এবং উপকার সম্পর্কে কিছু কথা বলব।তিন পদ্ধতিতে এ ধ্বণি শোনার ব্যাবস্থা আছে। আমি সর্বোত্তম পদ্ধতিটিই বলব। অনাহাদ ধ্বণি শুনতে হলে প্রথমে আপনাকে ধ্যাণ করার নিয়মটা একটু জেনে নিতে হবে। প্রথমেই আপনাকে ধ্যাণ করার পূর্বে একটু রিলাক্স মুডে যেতে হবে। পৃথিবীর সকল মেডিটেশনের একটি নিয়ম কমন, সেটা হল যেখানে যেভাবেই বসেন আপনার মেরুদন্ডটা একটু সোজা করে বসা। জোড় করে ধ্যাণে বসতে যাবেন না। যদিও অনেকের জন্য প্রতিদিন সময় মেইনটেইন করে মেডিটেশনে বসা বোরিং মনে হয়। তাই ধ্যাণ করাকে নিজের জীবনের সাথে জড়িয়ে নিতে হবে দৈনন্দিন কর্মের মত।
যদি চেয়ারেও বসেন তবে হেলান না দিয়ে একটু পিঠটাকে এগিয়েে সোজা করে বসুন।
আশেপাশের ষ্টোর থেকে ইয়ার প্লাগ নিয়ে নেবেন নিয়মিত করার আর যদি না পান তবে মোবাইলের হেডফোনটা কাজে লাগান, বাহিরের আওয়াজ যাতে ভেতরে না যায় সেই ব্যাবস্থা করুন। পুরোপুরি নীরব আওয়াজহীন পরিবেশ তৈরি করে নিন প্রথমে।
বাহিরের আওয়াজ যখন বন্ধ হবে এবার দেহের ভেতরে কয়েক ধরণের শব্দ পাবেন -ওদিকে খেয়াল একেবারে করবেন না। প্রথমে কয়েকবার স্বাভাবিকভাবে নি:শ্বাস নিন। এরপর ধীরে ধীরে ১০ /১১ বার উল্টোগুণে ০ পর্যন্ত নি:শ্বাস নিন। খুবই ধীর গতিতে। নি:শ্বাসের আসা যাওয়ার খেয়াল রাখুন আরও ১০/১১ বার আরও ধীরে। এরপর নি:শ্বাস বের হয়ে যে বাতাস ঠোঁটের উপরিভাগে লাগছে তার খেয়াল করুন আরও ১০/১১ বার। দুই ভ্রুর মাঝখানে কোনও চাপ দিবেন না। তাহলে মাথাব্যাথা এবং চোখ ব্যাথা করবে। একেবারে স্বাভাবিক থাকবেন। দেখবেন আপনার খেয়াল শূণ্যস্থানে সম্পূর্ণ ব্লাক বা ব্লাক হোল দেখা যায়। এখানেই শুরু আপনার অনাহাদ ধ্বণির কর্ম। এটা মহাবিশ্বের কয়েকজন মহামানবের ধ্যাণ পদ্ধতির অংশবিশেষ বললাম মাত্র।
আমরা যখন ধ্যাণে বসি আমাদের
১)কথা বলা বন্ধ করতে হবে।
২)কানে শোনা বন্ধ করতে হবে।
তৃতীয়তো যখন এই দুটো বন্ধ করি তখন ভেতরে অজস্র ভাবনা কথা বলা শুরু করে। এটাকে যারা বন্ধ করতে পারে তারাই ধ্যাণে কামিয়াব লাভ করতে পারে। তাদের জন্য একটি বুদ্ধি বা উপায় বলে দিচ্ছি। আমাদের ব্রেইন দুই অংশে বিভক্ত ডান সাইড বন্ধ হলে বাম সাইডের ব্রেণ তাকে চালায়। বাম সাইড বন্ধ হলে ডান সাইড তাকে চালায়।তাই অধিকাংশ মানুষ অনাহাদ ধ্বণি ডান সাইডেই শুনে থাকে। যখন এখানে অজস্র ভাবনা আসবে তাকে মস্তিষ্কের অন্য সাইডে পাঠিয়ে দিন সেখানে প্রভূর স্মরণ করুন। এবং এটা খুব সহজেই আমরা পারি। তবেই দেখবেন আপনি সহজে সেই ধ্বণি শুনতে পারবেন। এই ধ্বণি সবার মাঝেই আছে। এটা এমন একটা দুনিয়ার আওয়াজ একবার যখন শুনবেন আপনার পুরো ভেতর বাহিরের রাজ্যই পাল্টে যাবে। এটাই ওঁম, এটাই হুঁ এটাই বাইবেলের সেই শব্দ যার কথা বাইবেলে বর্ণণা আছে। এটাই উচ্চ মোকামের প্রার্থণা। পরিপূর্ণ আত্ম সমর্পণ -না মুখে বলা লাগবে,না কানে শোনা যাবে যা একমাত্র হৃদয়ই শুনবে। এটাকেই আত্মসমর্পণ বলে। প্রথমে যে আওয়াজ শুনবেন তখন আরেকটু এগুবেন আরও মধুর শব্দ। পুরোপুরি সম্মোহিত হয়ে যাবেন এতো মধুর ধ্বণি।
যখন আপনি সেই ধ্বণি শুনবেন তখন কিছু চাওয়ার প্রয়োজন নেই উনি সবই জানেন। আপনি তন্ময় হয়ে শুনুন শুধু। যত শব্দের মূলে যাবেন তত আপনার জন্য পরবর্তীতে শোনা সহজ হবে। তখন আপনার ধ্যাণে বসার প্রয়োজন হবেনা। ধ্যানই আপনাকে সেখানে নিয়ে যাবে।
মনে রাখবেন মেডিটেশন একটা তরি বন্দরে ভেড়ার পড়ে তাকে একটা সময় ধরে রাখা লাগেনা।মেডিটেশন কোনও টর্চার নয়। প্রতিদিন ১০/১৫ মিনিটের অভ্যেস আপনাকে অনেক দূরে নিয়ে যাবে।আর অনাহাদ ধ্বণি তে আপনি পুরোপুরি তন্ময়তায় থাকবেন।ধীরে ধীরে এ ধ্বণি আপনাকে ধ্যাণবস্থায় এমন অবস্থানে নিয়ে যাবে, আপনি আপনাকে ভুলে যাবেন নিজের বলে কিছুই থাকবে না। অনেকে বলেন ঝিঁ ঝিঁ পোকার মত আওয়াজ পেয়ে থাকেন। তাদের বলব সেই আওয়াজের পরেই ধীরে ধীরে একটার পর আরেকটা শব্দ আসবে। আপনাকে তা ধরতে হবে। সৃষ্টি জগতের সুপ্রিম সিক্রেট এই অনাহাদ ধ্বণি। এটাকে ধ্বণিও বলতে পারিনা কারন শব্দ ও নয় এটা,নীরবতাও নয়। দুটো বন্ধ হয়ে যাবার পর ইহার দেখা মিলে।এর উপকারিতা বর্ণণা করা সম্ভব নয়। গবেষণালব্ধ মোটামুটি ১০ টি উপকার বলে দিচ্ছি:-
১) আপনার কনসেন্ট্রেশন পাওয়ার বাড়বে + নির্দিষ্ট স্থানে ফোকাসের শক্তিও বাড়বে।যা লেখাপড়া সহ বিভিন্ন কাজে লাগে।
২)আপনার নীরিক্ষণ শক্তি বা observation power বাড়ে।
৩) বর্তমানে আপনার মানসিক শক্তি বাড়বে।
৪) অন্যান্য ইন্দ্রুয়সমূহের শক্তিও বাড়বে।
৫) মাদকতা, নেশা অথবা খারাপ কর্মাদির অভ্যাস দূর হবে।
৬)সূক্ষ্মতম চিন্তাধারা যা অকল্পনীয় তা সহজেই পাওয়া সম্ভব।
৭) আপনার চারিত্রিক ধৈর্য্য এবং চারিদিকে মানুষের সম্মোহনী ক্ষমতা বাড়বে।
৮) সম্পর্কের সমঝোতা আরও উন্নত হবে।
৯) পরমের সাথে এবং সৃষ্টি জগতের সাথে এটাচমেন্ট আরও উন্নত হবে।
১০) আপনার অবৈধ রাগ নিয়ন্ত্রণে এসে পড়বে।
আপনারা নিত্যদিন সেই ওঁমকার বা হু এর টাচে থাকুন। ভাল থাকুন।
জয়গুরু।
A N W A R
Comments
Post a Comment