Skip to main content

সাধকের জীবন ও কর্ম (১১-২০ পর্ব)

সাধকের জীবন ও কর্ম (পর্ব:১১)
--------------------------------------------
হযরত হাসান বছরী রহ: বলেন, আমি চারটি লোকের নিকট খুবই অপ্রস্তুত হয়েছি ও কিছুু শিক্ষা অর্জন করেছি।‎তাদের একজন হিজরা,দ্বিতীয়জন মাতাল, তৃতীয়জন বালক এবং চতুর্থজন একটি মহিলা।
কীভাবে তা বলছি -
(ক) একদা আমি একটি হিজরা (নপুংসক) লোকের পরিহিত কাপড় ধরে আকর্ষণ করায় ‎সে বলল,জনাব! আমার গোপন রহস্য বাইরে এখনো প্রকাশ পায়নি আপনি কি তা প্রকাশ করে দিতে চান? তৎক্ষণাত প্রভূর গোপন থাকার বিষয় আমার অন্তরকে প্রভাবিত করে।
(খ)একদা একটি মদখোর মাতাল অবস্থায় হেলে-দুলে পথ চলছে। আমি তাকে বললাম, পথ পিচ্ছিল কিন্তু সাবধানে পা ফেল,নইলে আছাড় খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে জবাবে বলল,তুমি তোমার পা দুটোকো ঠিকভাবে ফেলে চলো। আমি তো মাতাল মানুষ, আছাড় খেলে কিন্তু ক্ষতি হবেনা। নিজের কাপড়ে ময়লা লাগলে তা ধুয়ে পরিষ্কার করে নেব। কিন্তু তুমি বড় এক আউলিয়া, তোমার শিষ্য - সাগরেদের অভাব নেই। তারা তোমার উপরেই ভর করে চলে। যদি চলার পথে তুমি কুপোকাত হও তবে তোমার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সবারই এক অবস্থা হবে। কাজেই আমার চাইতে পথ চলার ক্ষেত্রে তোমার দ্বায়িত্ব অনেক বেশী।
(গ) একদা একটি বালক একটি জ্বালানো প্রদীপ হাতে নিয়ে চলছিল। আমি তাঁর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, বালক! এ আলো কোথা থেকে আনলে? সে হঠাৎ প্রদীপটি নিভিয়ে ফেলে বলল,আগে আপনি বলুন এখন আলো কোথায় চলে গেল? তারপর বলব আমি কোথা থেকে এনেছি।
(ঘ) একদা এক সুন্দরী মহিলাকে দেখলাম সে চুল ছেড়ে দিয়ে কোথায় চলছে। আমি তাকে সাবধান করে দিলাম, ওহে মহিলা! তুমি এভাবে চলছ কেন? মস্তক ঢেকে নাও।মহিলাটি কথা শুনে ‎ দাঁড়িয়ে গেল এবং আমাকে বলল - দেখুন মহাত্মন! আমি আমার স্বামী বিচ্ছেদের কারণে দিশেহারা হয়ে গেছি, আমার অন্য দিকে খেয়াল নেই। কিন্তু আমি আশ্চর্য হয়েছি আপনার ব্যাপারে! আপনি আল্লাহর অলী,আপনার আল্লাহর প্রতি এত বেশী মহব্বত অথচ আপনার দেখি সব ঠিক আছে। আল্লাহর প্রেমের দাবী রেখেও আপনি কে কিভাবে চলে তাও লক্ষ রাখেন। আশ্চর্য বটে! প্রেমে মগ্ন লোকদের দ্বারা এ কি করে সম্ভব?
انوارحُسَين‎

সাধকের জীবন ও কর্ম (পর্ব:১২)
----------------------------
হযরত ইউসূফ ইবনে হুসাইন রাযী রহ: অপূর্ব জ্যোতিময় এক তরুন।হযরত ইউসূফ (আ:) এর ন্যায় এক রুপসীর প্রেম প্রত্যাখ্যাণ করে চলে গেলেন অন্য এক অচেনা অঞ্চলে।
এক রাতে নবী ইউসূফকে স্বপ্ন দেখে আদিষ্ট হলেন যে, সে কালের শ্রেষ্ঠ তাপস হযরত জুননুন মিশরী (রহ:) এর কাছে যেন গিয়ে দীক্ষা নেন। প্রত্যুষেই মিশরে রওয়ানা দিলেন ইউসূফ রাযী ( রহ:)।মিশরে গিয়ে এক মসজিদে যুননুন মিশরী রহ: দেখা পেলেন বটে। তবে সাহস করে তাকে কিছু বলতে পারলেন না। এভাবে সংকোচের শিকার হয়ে পুরো একটা বছর পার হয়ে গেল। পরে একদিন জুননুন মিশরী (রহ:) তাঁর নাম ঠিকানা জিজ্ঞাস করলেন।
এবার সাহস এল মনে। তরুন বললেন আমি 'রা' প্রদেশ থেকে এসেছি। আমার কিছু নিবেদন আছে। কিন্তু না, আবার হতাশ।
যুননুন রহ: কিছু বললেন না, জানতেও চাইলেন না। আরও এক বছর কেটে গেল। তারপর একদিন
হঠাৎ যুননুন রহ: প্রশ্ন করলেন,তুমি কি যেন বলবে বলেছিলে? বল শোনা যাক।
আর যায় কোথায়! প্রচুর সাহস নিয়ে তরুন বলল- আমি আপনার দরবারে ইসমে আযম শিখতে এসেছি। কিন্তু এবারও চুপ রয়ে গেলেন যুননুন রহ: এভাবে আরও একবছর অতিবাহিত হল।
তারপর হঠাৎ একদিন যুননুন রহ: তরুণোর হাতে মুখ- আঁটা কাঠের একটি কৌঁটা দিয়ে বললেন, নীল নদের অমুক যায়গায় একটা লোক আছে। তাঁকে এটা দিয়ে এস।আর সে যা বলে তা মনে রেখো।
কৌঁটা নিয়ে যেতে যেতে তরুণের মনে হল, এর ভেতরে কী যেন নড়াচড়া করছে। প্রবল কৌতুহল দমন করতে না পেরে তিনি কৌঁটার মুখ খুরে যেই দেখতে যাবেন, অমনি ওর ভেতর থেকে একটি ছোট ইঁদুর লাফ দিয়ে বেরিয়ে গেল।
বড় বেকুব হয়ে গেল তরুণ। এইবার! নদীপারের লোকটিকে দিয়ে আসবেন নাকি ফিরে যাবেন হযরত যুননুন রহ: কাছে, ভেবে চিন্তে তিনি লোকটির কাছেই ফিরে গেলেন। তাঁকে কিছু বলার আগেই লোকটি বললেন - তুমি হযরত যুননুন রহমাতুল্লাহ এর কাছে এসমে আজম শিখতে এসেছিলে?তরুন সঙ্গে সঙ্গে বলল, জ্বী হুজুর।আপনি ঠিকই ধরেছেন। লোকটি বললেন, তিনি হয়তো তোমাকে একটু অসহিঞ্চু মনে করে ইঁদুরটি তোমার হাতে দিয়ে থাকবেন। আর তুমি সামান্য একটি ইঁদুর ধরে রাখতে পারলেনা? কী করে সে মহান মহার্ঘ্য পবিত্র নাম অন্তরে ধরে রাখবে?
তরুণ সত্যিই বড় লজ্জিত হয়ে ফিরে গেলেন যুননুন রহ: কাছে। তিনি সবই জানতেন। তাই বললেন, তোমাকে ইসমে আযম শেখার ব্যাপারে পরপর সাতবার আল্লাহর কাছে অনুমতি চেয়েছি। পাইনি। শেষে ইঁদুর দিয়ে পরীক্ষা করার অনুমতি পেলাম।
انوارحُسَين‎

সাধকের জীবন ও কর্ম (পর্ব:১৩)
--------------------------------------------
পূর্বেই ইউসুফ ইবনে রাযীর ঘটনা বলেছিলাম আজ তার ওয়াজের তাসীর সম্পর্কে ছোট্ট একটি ঘটনা বলব।
আল্লাহর পথে ইউসূফ (রহ:) মানুষকে ডাকা শুরু করলেন একজন দুইজন করে অসংখ্য মানুষ তার ওয়াজ শুনতে শুরু করল।ভাল লোকেরা যেমন শুনতে লাগলো কিছু মন্দ লোকও শুনতে লাগলো। এমন এক যুবকের নাম আবদুল ওয়াহেদ যাহেদ। বংশের কলঙ্ক,কুলাঙ্গার। খুবই খারাপ প্রকৃতির লোক ছিল।যখন হযরত ওয়াজ করছিলেন যে, উপায়ন্তর না দেখে একজন মানুষ যেমন অন্য মানুষকে ঠিক তেমনি আল্লাহপাকও আপন রহমতে পাপী লোকদের ডাকেন।এ কথা শুনে যাহেদ বিচলিত হয়ে পড়ল টুপি পোশাক খুলে কবরস্থানে বেহুঁশ অবস্থায় তিনদিন পড়ে রইলো।
এদিকে হযরত ইউসূফ (রহ:) প্রতি এলহাম হল। অনুতপ্ত সে যুবক যায়েদকে খোঁজার নির্দেশ দেয়া হল তাকে। অনেক খোঁজাখুজির পর তাঁকে বেহুঁশ অবস্থায় কবরস্থানে পাওয়া গেল। তিনি তাঁর কাছে বসে পরম যত্নে যুকটির মাথা তাঁর কোলে তুলে নিলেন। যুবক চোখ খুলে দেখল সে ইউসূফ রাযী রহ: কোলে শুয়ে আছে।
বিস্মত হয়ে গেল যুবকটি এবং হুজুর সত্যি বলেছেন যে আল্লাহপাক আপন রহমতেও প্রভূকে ডাকেন।
এরুপ অসংখ্য লোক ইউসূফ রাযী রহ: ওয়াজের তাসিরে ভাল হয়ে যেত।

সাধকের জীবন ও কর্ম : পর্ব-১৪
--------------------------------------------
বিশিষ্ট বুজুর্গ হযরত আ: ওয়াহেদ বিন যায়েদ বলেন,আমি ক্রমাগত তিন রাত এ দোয়া করলাম "হে আল্লাহ! জান্নাতে যে আমার বন্ধু হবে দুনিয়াতে তুমি আমাকে তার সাক্ষাৎ দান কর। তিনদিন পর আমাকে বলা হল, হাবশী বাঁদী মাইমুনা তোমার বন্ধু হবে। কুফা নগরীর অমুক স্থানে তার বাড়ী।
আমি কুফা গমন করে জানতে পারলাম, সে এক জঙ্গলে বকরী চরায়। জঙ্গলে গিয়ে দেখলাম, মইমুনা পশমী জুব্বা পরে নামায পড়ছে। সামনে একটি লাঠি পড়ে আছে। পরণের পোশাকে লেখা ছিল -এই অধম না বিক্রয়যোগ্য, না ক্রয়যোগ্য। আমি অবাক হয়ে দেখলাম মাইমুনার আশেপাশে বাঘ ও বকরী একসাথে চলাফেরা করছে। মাইমুনা সালাম ফিরিয়ে আমাকে লক্ষ্য করে বলল, ইবনে জায়েদ। এখন চলে যাও, এটা প্রতিশ্রুতির সময় নয়। কাল হাশরের দিন এসো।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমাকে কে বলে দিল, আমি ইবনে যায়েদ? সে বলল,রোজে আজলে(ইহাও হাশর) যার সাথে যার পরিচয় হয়েছে, এখানেও সে তাকে চিনতে পারে,তাঁর সঙ্গে হৃদয়ের টান থাকে।
আমি তাকে কিছু উপদেশ দেয়ার জন্য বললাম,সে বলল,আল্লাহ পাক তার বান্দাকে কোন কিছু দান করার পর সে যদি ওটার পেছনে মত্ত থাকে তবে আল্লাহর সাথে তার মোহাব্বত বা ভালবাসা নষ্ট হয়ে যায়। তারপর সে কয়েকটি আয়াত পাঠ করল, যার অর্থ হলো- হে নসীহতকারী! তুমি মানুষকে পাপ হতে বেঁচে থাকতে নসীহত কর অথচ তুমি নিজেই সে পাপে নিমজ্জিত। তুমি আগে নিজে সংশোধন হও তারপর তোমার নসীহতে মানুষ উপকৃত হবে।
অবশেষে তাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, তোমার বকরীর উপর বাঘ আক্রমণ করেনা কেন? সে বলল, আমি আমার মনিবের সাথে সন্ধি করে নিয়েছি তাই তিনি আমার বকরী ও বাঘের মধ্যে সন্ধি করে দিয়েছেন।

انوارحُسَين‎

সাধকের জীবন ও কর্ম, পর্ব :১৫
-------------------------------------------
হযরত মালেক বিন দিনারের তওবা
প্রখ্যাত বুজুর্গ হযরত মালেক বিন দিনারের জীবনের প্রথম সময় কালটা ভাল কাটেনি। দিনরাত মদ খেয়ে নেশায় লিপ্ত থাকতেন। তার তওবা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলতেন -আমার এক বাঁদীর গর্ভে এক মেয়ে সন্তান জন্ম হয়।মেয়েটাকে আমি অত্যন্ত স্নেহ করতাম। আমার সে প্রাণপ্রিয় নয়নমণিটি দু বছর বয়সে মৃত্যূ বরণ করে। এতে আমি অত্যন্ত কষ্ট পেলাম।
এক রাতের ঘটনা :রাতটি ছিল শবে বরাত এবং একই সাথে জুমুয়ার রাত। আমি মদের নেশায় মত্ত্ব হয়ে এশার নামায না পড়েই ঘুমিয়ে পড়লাম।স্বপ্নে দেখলাম হাশরের মাঠ শুরু হয়েছে। সবার সাথে সাথে আমিও কবর হতে উঠে মাঠের দিকে চলছি। হঠাৎ পেছনে কিসের শব্দ পেয়ে ফিরে দেখলাম, দেখি এক বিরাট অজগর আমার দিকে হা করে আসছে। আমি ভয়ে সামনের দিকে ছুটতে লাগলাম সাপটিও পেছনে পেছনে ছুটল সাদা পোষাক পড়া এক বৃদ্ধের দেখা পেলাম। তার কাছে সাহায্য চাইলাম সে বলল সাপ আমার তুলনায় শক্তিশালী, তাকে প্রতিরোধ করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
আবার দৌড় দিতে লাগলাম অবশেষে এক টিলার উপর গিয়ে উঠলাম। সেখানে উঠেই জাহান্নামের ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে পেলাম।সাপের ভয়ে পড়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ অদৃশ্য হতে কে যেন বলে উঠল, পিছনে সড়ে দাড়াঁও তুমি জাহান্নামী নও।সাথে সাথে সাপ আবারও আমাকে তাড়া করতে লাগল। আবারও সেই বৃদ্ধ কে ডেকে বললাম, আমি এ কঠিন বিপদে আপনার কাছে সাহায্য চাইলাম আপনি বিন্দুমাত্র সাহায্য করলেন না।
আমার করুন নিবেদন শুনে বৃদ্ধ কেঁদে ফেলে বললেন, আমি বড় কমজোড়, তোমাকে সাহায্য করার মত শক্তি আমার নেই। সামনে এগুতে এগুতে দেখলাম এক গোলাকার পাহাড় সেখানে অনেক শিশুর মাঝে আমার মৃত মেয়েটিকে দেখতে পেলাম। আমি তাকে কোলে নেয়া মাত্র সাপ পেছনে সড়ে গেল। তখন আমার কোলে বসে সূরা হাদীদের ১৬ নং আয়াত পাঠ করতে লাগল।যার অর্থ -" ঈমানদারদের জন্য কি এ সময় আসেনি যে,তাদের অন্তর সমূহ আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য ধর্ম অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিগলিত হওয়ার।"
তার তেলাওয়াত শুনে আমি কাঁদতে লাগলাম।কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করলাম ঐ সাপ আমাকে কেন তাড়া করছে? মেয়ে উত্তর দিল, ওটা আপনার বদ আমল। আর ঐ বৃদ্ধ নেক আমল। আপনার নেক আমল বদ আমল থেকে দূর্বল।
আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল তওবা করলাম প্রভূর দরবারে।

انوارحُسَين‎

সাধকের জীবন ও কর্ম  (পর্বঃ১৬)
হযরত বাবা শাহ আলী বোগদাদী (রহঃ)

 রহস্য জনক ওফাত -
-----------------------------------------------------------------------
বাবা শাহ্ আলি একবার ৪০
দিনের ধ্যাণ-সাধনায় মগ্ন হন।ধ্যণ মগ্ন হওয়ার
আগে বাবা তার মুরিদদের ৪০ দিন পূর্ণ হবার
আগে ভুলেও যেন হুজরার দরজা না খোলার নির্দেশ
দেন।বাবা হুজরার ভিতর আল্লাহর
পাকের ফানা ফিল্লাহর নামাজে রত হন।
ফানা ফিল্লাহর নামাজ তরীকার জগতে খুবই
কঠিন নামাজ।ইহা আত্মজ্ঞান উচ্চ স্তরের সাধক ছাড়া কেউ এ খবর জানেনা এমনকি সব আউলিয়ারাও এই নামাজ পড়ার
যোগ্যতা রাখেন না।উল্লেখ্য এই নামাজ
পড়াকালীন সময় আল্লাহ্ র তরফ থেকে অনেক
ভয়ংকর সৃষ্টির সামনে পড়তে হয়,তাই এই নামাজ
পড়াকালিন সময়ে কেউ যদি সামান্য মনোযোগ
অন্যদিকে দেন,তাহলে আল্লাহ্ র
জালালি নূরে তার দেহ ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে যাওয়ার
সম্ভবনা আছে। বাবা শাহ্ আলির কথা মত সবাই
বাবার চিল্লা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রইলেন।কিন্তু
চিল্লা শেষ হওয়ার ১ দিন আগে অর্থাৎ ৩৯ তম
দিনে বাবার হুজরা হতে অসম্ভব চীৎকার
আসতে থাকে ।বাবার মুরিদ্গন তখন উপায়
না পেয়ে বাবার নিষেধ থাকা সত্ত্বেও হুজরার
দরজা খুলে দেখেন বাবা শাহ্ আলীর দেহ
রক্তাক্ত অবস্থায় ছিন্ন বিছিন্ন হয়ে আছে ।
পরে ভক্তরা বাবার সেই জামালীয়তের দেহটাকে
সসম্মানে মিরপুরে দাফন করেন (মতভেদ আছে কেউ বলে জীবিত অবস্থায় এমন হয়েছে) ।বর্তমানে মিরপুরেই
শাহ্ আলি বাবার পবিত্র মাজার শরিফ আছে।বাবা শাহ আলি এখনও তাহার খাঁটি আশেকদের সাথে দেখা করেন ।


انوارحُسَين‎
সাধকের জীবন ও কর্ম (১৭)

বাবা খান জাহান আলী (রহ:)
----------------------------------------
হযরত খানজাহান আলি (র.) (জন্ম ১৩৬৯ - পর্দা নেন অক্টোবর ২৫, ১৪৫৯) ছিলেন একজন মুসলিম ধর্ম প্রচারক এবং বাংলাদেশের বাগেরহাটের স্থানীয় শাসক। তাঁর অন্যান্য নামের মধ্যে রয়েছে উলুঘ খান, খান-ই-আজম ইত্যাদি।

খান জাহান আলির তৈরি ষাট গম্বুজ মসজিদ
হযরত উলুঘ খানজাহান আলি (র.) ১৩৬৯ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লিতে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আকবর খাঁ এবং মাতার নাম আম্বিয়া বিবি । ধারণা করা হয় যে তার পূর্বপুরুষগণ তুরস্কের অধিবাসী ছিলেন। খানজাহান আলির প্রাথমিক শিক্ষা তার পিতার কাছে শুরু হলেও তিনি তার মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন দিল্লিস্থ বিখ্যাত ওয়ালি এ কামিল পির শাহ নেয়ামত উল্লাহর কাছে। তিনি কুরআন, হাদিস, সুন্নাহ ও ফিকহ শাস্ত্রের উপর গভীর জ্ঞানার্জন করেন।

খানজাহান আলি ১৩৮৯ খ্রিষ্টাব্দে সেনা বাহিনীতে সেনাপতির পদে কর্ম জীবন আরম্ভ করেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই প্রধান সেনাপতি পদে উন্নীত হন। ১৩৯৪ এ মাত্র ২৬/২৭ বছর বয়সে তিনি জৈনপুর প্রদেশের জাবিতান (গভর্নর) পদে যোগ দেন। পরবর্তীতে সুলতান খানজাহানের নেতৃত্বে ৬০,০০০ সুশিক্ষিত অগ্রবর্তী সেনাদল সহ আরও দুই লক্ষ সৈন্য নিয়ে বাংলা আক্রমণ করলে রাজা গণেশ দিনাজপুরের ভাতুরিয়াতে আশ্রয় নেন। ১৪১৮ খ্রিষ্টাব্দে খানজাহান যশোরের বারবাজারে অবস্থান নেন এবং বাংলার দক্ষিণ পশ্চিম অংশে ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রসার আরম্ভ করেন।

খানজাহানের প্রথম স্ত্রীর নাম সোনা বিবি। কথিত আছে সোনা বিবি ছিলেন খানজাহানের পির নুর-কুতুবুল আলমের একমাত্র কন্যা। খানজাহানের দ্বিতীয় স্ত্রী রূপা বিবি ওরফে বিবি বেগনি ধর্মান্তরিত মুসলমান ছিলেন। খানজাহান আলি তাঁর দুই স্ত্রীর নাম অনুসারে সোনা মসজিদ এবং বিবি বেগনি মসজিদ নামে মসজিদ নির্মাণ করেন।
হজরত খান জাহান আলী (রহ) এই বৃহত্ অঞ্চলে কৃষি বিপ্লবের সূচনা করেন। নোনা পানির অঞ্চলে মিঠা পানির ব্যবস্থা করেন এবং অনেক বিশাল বিশাল দীঘি খনন করেন। যার অনেকেই ‘খাঞ্জালীর দীঘি’ নামে অনেকের কাছে পরিচিত। হজরত খান জাহান আলী (রহ) অনেক সুরম্য রাস্তা তৈরি করেন। তার নির্মিত রাস্তা খাঞ্জালীর জাঙ্গাল নামে অভিহিত। বারো বাজার হইতে বাগেরহাট পর্যন্ত প্রায় ৭০ মাইল দীর্ঘ রাস্তা এখনও ‘খাঞ্জালীর রাস্তা’ নামে পরিচিত। তিনি বাগেরহাটে নয় গম্বুজ ও ষাট গম্বুজ মসজিদ নির্মাণ করেন। তিনি এই এলাকায় শিক্ষা বিস্তার করার জন্য বিভিন্ন স্থানে মাদ্রাসা স্থাপন করেন। হজরত খান জাহান আলীর (রহ) তৈরি এরকম নিদর্শন যশোর জেলার বিদ্যানন্দ কাটি, বারো বাজার প্রভৃতি স্থানে খুলনা জেলার বাগেরহাটে এখনও বিদ্যমান। ষাট গম্বুজ মসজিদের নাম ষাট গম্বুজ হলেও মসজিদের গম্বুজের সংখ্যা ৭৭টি। এটা যেমন ছিল নামাজের স্থান তেমনি ছিল সেনা নিবাস। এই মসজিদের দেড় মাইল দূরে এই দরবেশ শাসকের অন্তিম শয়নভূমি অবস্থিত। তার মাজারে কয়েকটি আরবী ও ফারর্সীতে উত্কীর্ণ শিলা লিপি রয়েছে। একটি শিলা লিপিতে বলা হয়েছে: আল্লাহর নগণ্য বান্দা রব্বুল আলামীনের রহমত প্রত্যাশী সাইদুল মুরসালিনের অনুরক্ত, খাটি আলেমগণের বন্ধু ইসলাম ও মুসলিমগণের প্রতিষ্ঠাকারী উলুগ খান-ই-ই- জাহান। তার উপর বর্ষিত হোক আল্লাহর রহমত ও সন্তুষ্টি। তিনি ছিলেন একজন সুফি, সিপাহসালার, ইসলাম প্রচারক ও স্থপতি।

হযরত খানজাহান আলি (র.) অক্টোবর ২৫, ১৪৫৯ তারিখে (মাজারশরিফের শিলালিপি অনুযায়ী ৮৬৩ হিজরি ২৬শে জিলহাজ) ষাট গম্বুজ মসজিদের দরবার গৃহে এশার নামাজ রত অবস্থায় ৯০/১০০ বছর বয়সে পর্দা নেন।

★ সাধকের জীবন ও কর্ম : (পর্ব-১৮)

শ্রী শ্রী সাধু দূর্গাচরণ নাগ মহাশয়

পূর্ববঙ্গের লোকদের কোথাও তীর্থ করতে যাওয়ার দরকার নাই। কেননা সাধু নাগ মহাশয়ের বাড়িই হবে পুণ্য তীর্থভূমি।’ কথাগুলো বলেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। স্বামী বিবেকানন্দের ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা হয়নি। আজ সাধু নাগ মহাশয়ের বাড়ি সত্যিই তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের দেওভোগের নাগবাড়ি আজ হয়ে উঠেছে শত-সহস্র মানুষের পুণ্যভূমি।১২৫৩ সালের ৭ ভাদ্র, ১৮৪৬ সালের ২২ আগস্ট, শুকা প্রতিপদ তিথিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
সেবাকেই সাধু নাগ মহাশয় জীবনের একমাত্র ধর্ম হিসেবে নিয়েছিলেন। তিনি নিজের ঘর ছেড়ে দিয়ে বাইরে রাত কাটাতেন অতিথিদের জন্য। নিজে না খেয়ে অতিথিদের খাওয়াতেন। তার চোখে জীবজন্তু সবই ছিল ভগবানের অংশ। সাম্প্রদায়িকতারও ঊর্ধ্বে ছিলেন তিনি। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মন্দির, মসজিদ, গির্জা দেখলে জোড়হাত করে প্রণাম করতেন। শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্ম সমন্বয় সাধনে তার অনুসারী সাধু নাগ মহাশয় ছিলেন অগ্রগামী। মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ ছিল না তার কাছে। সাধু নাগ মহাশয় ছিলেন গৃহী সন্ন্যাসী। সন্ন্যাস মানে সবকিছু ত্যাগ করে সন্ন্যাসীর ধর্ম পালন করা। গৃহী সন্ন্যাসী হচ্ছে ঘরে থেকে সন্ন্যাস ধর্ম পালন করা। সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ করার জন্য একবার সাধু নাগ মহাশয় যান শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে। সাধু নাগ মহাশয়ের চেহারা দেখে সব বুঝতে পেরে ঠাকুর বলেছিলেন, ‘তোকে আর সন্ন্যাসী হতে হবে না, তুই ঘরেই থাকিস। তোকে দেখে ঘরের মানুষ ধর্ম পালন করা শিখবে।’ সেই থেকে সাধু নাগ মহাশয় ঘরে থেকেই ধর্ম পালন শুরু করেন। হয়ে যান গৃহী সন্ন্যাসী।
সন্ন্যাসী হতে হলে গৃহ ত্যাগ করে সন্ন্যাস ধর্ম পালনে ব্রতী হতে হয়। কিন্তু গৃহী সন্ন্যাসী হতে হলে গৃহেই থাকতে হয়। তাকে থাকতে হয় কাম, ক্রোধ, মোহসহ অন্যান্য রিপুর সঙ্গে। স্ত্রী কাছে থাকবে, কিন্তু কামকে দমন করে। সংসার করবে, মোহকে বিসর্জন দিয়ে। একজন অন্যায় করলে ক্রোধকে দমন করেই পথ চলতে হবে। সাধু নাগ মহাশয়কে দিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণ সংসার ধর্মীদের শিক্ষা দিয়েছেন।কীভাবে সংসারে থেকেও সন্ন্যাস ধর্ম পালন করা যায়। সাধু নাগ মহাশয়ের স্ত্রী শরৎকামিনী দেবী স্বামী সম্পর্কে বলতেন, “তার শরীরে কি মনে কোনো পরিবর্তন দেখিনি। ‘জয় রামকৃষ্ণ’ বলে তিনি জৈবভাবের মস্তকে পদাঘাত করে ইহলোক ত্যাগ করে চলে গেছেন। তিনি আগুনের মাঝে বাস করেছেন বটে, কিন্তু একদিনের জন্যও তার শরীর দগ্ধ হয়নি।”
সাধু নাগ মহাশয়কে প্রথম দেখেই শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন, ‘সংসারে থাকবি ঠিক পাঁকাল মাছের মতো, পাঁকাল মাছ পাঁকে থাকে, কিন্তু গায়ে পাঁক লাগে না। ঘরেও ঠিক তেমনি থাকবি, সংসারের ময়লা মনে লাগাবি না।’
সাধু নাগ মহাশয় শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে গেলে স্বামীজিকে উদ্দেশ করে ঠাকুর বলেছিলেন, ‘দেখেছিস ছেলেটিকে, আগুন জলন্ত আগুন।’ সত্যিই আগুন ছিলেন সাধু নাগ মহাশয়। ঠাকুরের অসুখ হলে সাধু নাগ মহাশয় যখন মানসিকভাবে ঠাকুরের অসুখ গ্রহণ করতে যাবেন ঠিক তখনই ঠাকুর তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি জানি তুই আমার রোগ সারাতে পারিস।’
শ্রীমাসারদা দেবী সাধু নাগ মহাশয়কে ছেলের মতো ভালবাসতেন। মা নিজের হাতে সাধু নাগ মহাশয়কে সন্দেশ ও পান খাইয়ে দিয়েছিলেন বেলুর মঠ থেকে। আরেকবার মাÑ শ্রীঠাকুর, অভিনেতা গিরিশ ঘোষ আর সাধু নাগ মহাশয়ের ছবি পরিষ্কার করে তাতে চন্দনের ফোঁটা দিতে দিতে সাধু নাগ মহাশয়ের ছবি দেখিয়ে একজন ভক্তকে বলেছিলেন, ‘কত ভক্তই তো এলো গেল, এর মতো ভক্ত আর একটিও দেখলাম না।’
সাধু নাগ মহাশয় স্বামীজিকে দেখলে প্রণাম করতেন, আবার স্বামীজি সাধু নাগ মহাশয়কে প্রণাম করতেন। স্বামীজি তার এক চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘সমস্ত পৃথিবী ঘুরিলাম, সাধু নাগ মহাশয়ের ন্যায় মহাপুরুষ কোথাও দেখিলাম না। সমুদ্রেরও জোয়ার-ভাটা আছে, কিন্তু সাধু নাগ মহাশয়ের মধ্যে কোনোরূপ ভাব বিপর্যয় দেখি নাই।’ ঢাকা আসার আগে স্বামীজি বলেছিলেন, ‘ও দেশে যাইয়া আর বক্তৃতা করবার ইচ্ছা বা প্রয়োজন নাই। যে দেশে সাধু নাগ মহাশয়ের চন্দ্রালোকে আলোকিত সেখানে আমি গিয়ে আর বেশি কী বলব। উহার ন্যায় মহাপুরুষের চিন্তা তরঙ্গে দেশের চিন্তা স্রোতের গতি ফিরিয়া যায়।’ উপেন্দ্র চন্দ্র ধরের সঙ্গে স্বামীজি শ্রীশরচ্চন্দ্র চক্রবর্তী রচিত ‘সাধু নাগ মহাশয়’ বই সম্বন্ধে কথা উঠলে স্বামীজি বলেছিলেন, ‘তাহার কথা পুস্তকে কী লিখিবে? শরৎ কী জানে? তাহাকে সাধু লিখিয়াছে, বড়ই আশ্চর্যান্বিত হইলাম। তাহাকে অবতার বলিলেও ছোট করা হয়। তাহার জন্মভূমি দেওভোগের একটা ধূলিকণা শত শত অবতার তৈয়ার করিতে পারে।’
১৩০৬ স১৩০৬ সালের ১৩ পৌষ সকাল ১০টা ৫ মিনিটে সাধু নাগ মহাশয় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দিনে দিনে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ নাগবাড়ি রূপ পায় এক পুণ্যধামে, গড়ে ওঠে সাধু নাগ মহাশয় আশ্রম। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে ২৫ মার্চ স্বামী বিবেকানন্দ এসেছিলেন নাগবাড়িতে। এ ছাড়া এসেছেন স্বামী প্রেমানন্দ, স্বামী ব্রহ্মনন্দ, স্বামী তুরীয়ানন্দ, বেলুর মঠের প্রেসিডেন্ট মহারাজ, সহসভাপতি মহারাজ, সম্পাদক মহারাজ, পশ্চিম বাংলার সাবেক গভর্নর, ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনারসহ আরও অনেক আলোকিত ব্যক্তিত্ব।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, সাধু নাগ মহাশয় আশ্রম

edition : A N W A R


সাধকের জীবন ও কর্ম (পর্ব:১৯)
---------------------
বাবা শাহজালাল ইয়েমেনী ( شاه جلال‎‎) জন্ম তুরস্কে ৬৭১ হিঃ ১২৭১ইং। তাঁর জন্মভূমি ছিল প্রাচীন আরবে আযমের হেজাজ ভূমির তৎকালীন প্রদেশ ইয়্যামন দেশের কুনিয়া নামক শহর। শাহ জালাল যখন তিন মাসের শিশুবালক, তখনই তাঁর মাতার মৃত্যু হয়। জন্মগতভাবে শাহ জালাল দরবেশ পরিবারে জন্ম নিয়েছেন। জানা যায়, তাঁর পিতা ছিলেন একজন ধর্মানুরাগী মোজাহিদ, ইয়্যামনে ধর্ম যুদ্ধে তিনি নিহত হন এবং তাঁর মাতার দিক দিয়ে তিনি সৈয়দ বংশের প্রখ্যাত দরবেশ সৈয়দ জালাল সুরুখ বোখারীর দৌহিত্র ছিলেন।
শাহ জালাল শিশুকালেই মাতৃহীন হন এবং পাঁচ বছর বয়সে পিতাকে হারান। মামা আহমদ কবির তাঁকে দত্তক নেন । আহমদ কবির আরবী ভাষায় কোরআন হাদিস শিক্ষা দেয়া সহ ইসলাম ধর্মের প্রাথমিক বিষয়ে (নামাজ, রোজায়) অভ্যস্ততার গুরুত্ব প্রদান করেন। পরবর্তিতে আহমদ কবীর শাহ জালালকে ইয়েমেন থেকে মক্কায় নিয়ে যান। মক্কা শহরে আহমদ কবীরের একটি আস্তানা (খানকাহ্) ছিল। সেখানে অন্যান্য শিষ্যদের সাথে শাহ জালালকেও উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলতে সচেষ্ট ছিলেন বলে জানা যায়।
শাহ জালাল-এর মামা ও শিক্ষাগুরু সৈয়দ শায়েখ আহমদ কবির সোহরাওয়ার্দি, সাধারণত; আহমদ কবির নামে তিনি বহুল পরিচিত। সৈয়দ আহমদ কবিরের পিতা নাম সৈয়দ জালাল সুরুখ বোখারী। সৈয়দ জালাল সুরুখ বোখারী শাহ জালালের জন্মের আগে ভারতবর্ষে ইসলাম প্রচারের লক্ষে মোলতানের নিকট আউচে এসে বসবাস করেন এবং সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সৈয়দ আহমদ কবির সোহরাওয়ার্দির পিতা সৈয়দ জালাল সুরুখ বোখারী ছিলেন তাঁর মুরশীদ।
সিলসিলাতে বাবা শাহজালাল:-
হযরত মোহাম্মদ (দ:)
হযরত আলী (রাঃ)
শেখ হাসান বসরী
শেখ হবিব আজমী
শেখ মারুফ কর্খী
শেখ সিংরি সুকতি
শেখ মমশাদ সিকন্দরী
শেখ আহমদ দিন্নুরী
শেখ আমুবিয়া
শেখ আজি উদ্দীন সোহরাওয়ার্দী
শেখ আবু নজিব জিয়াউদ্দিন
শেখ হিসাব উদ্দীন
শেখ মাখদুম
শেখ বাহাউদ্দীন জাকারিয়া
সৈয়দ জালাল সুরুখ বোখারী
সৈয়দ শায়েখ আহমদ কবির সোহরাওয়ার্দি
শাহ জালাল
বাবা শাহ জালালকে সুফি মতবাদে দীক্ষিত করাই আহমদ কবিরের মূল উদ্দেশ্য ছিল বলে জানা যায়; যে কারণে আহমদ কবিরের শাহ জালালকে নিয়ে মক্কায় আসা। মক্কা শহরে সোহরাওয়ার্দি তরিকার প্রবর্তক সিহাবুদ্দীনের প্রতিষ্ঠিত খানকায় (মরমী স্কুল) সে সময় আহমদ কবির ছিলেন প্রধান তত্ত্বাবধায়ক। আহমদ কবির শাহ জালালকে ইসলামের শরীয়ত ও মারিফত উভয়ধারায় শিক্ষাদানে দীক্ষিত করেন।
তিনি ছিলেন উপমহাদেশের বিখ্যাত সুফি দরবেশ। তাঁর পুরো নাম শায়খ শাহ জালাল কুনিয়াত মুজাররদ। ৭০৩ হিজরী মোতাবেক ১৩০৩ ইংরেজী সালে ৩২ বছর বয়সে দয়াল নবীপাক এবং তাঁর মহান আউলিয়াদের শান মান প্রচার এবং মহান প্রভূর বার্তা প্রচারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে এসেছিলেন।
যার জীবন যৌবন কাটালেন ধ্যান সাধনায়, ছোট থেকেই ছিলেন দয়াল নবীপাক, আউলিয়া কেরামের খুবই অনুরক্ত। একটা সময় রাবেয়া বসরী রা: এর ঘটনা উনাকে খুব প্রভাবান্বিত করতো। মা রাবেয়া বসরীর আধ্যাত্মিকতার প্রেমে উনি পড়ে গিয়েছিলেন। লোকমুখে শোনা যায় যে, হাশরে যদি বাবা শাহ্জালাল কে কাউকে সাথে করে জান্নাত নেয়ার অনুমতি প্রদান করা হয় তাহলে তিনি মা রাবেয়া বসরি রহ: কে চাইবেন। উনি বিয়ে করেন নি। প্রশ্ন করা হলে মা রাবেয়া বসরির মত বলতেন, সংসার জীবন পালন করতে গিয়ে যদি আমি আমার প্রভূকে ভুলে যাই তাহলে সে সংসার ধর্ম আমি পালন কিভাবে করব?
 শাহজালাল ইয়েমেনীর ধ্যান খেয়াল সর্বদাই আমার প্রভূ ছিলেন। সর্বদা তিনি ধ্যান মগ্নতায় ডুবে থাকতেন।
শাহ জালাল মুজাররদ তাঁর মামা ও গুরু সৈয়দ আহমদ কবিরের আস্তানায় আরব দেশে ছিলেন। শাহজালাল ভারতবর্ষে ধর্ম প্রচারের স্বপ্ন দেখার পরে সৈয়দ আহমদ কবির-এর কাছে ব্যক্ত করেন। মামা ও মুর্শিদ সৈয়দ আহমদ কবিরকে তা জানান। কবির এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিয়ে শাহজালালকে ভারতবর্ষে যাবার পরামর্শ দেন। যাত্রাকালে কবির শাহ জালালেরর হাতে এক মুঠো মাটি তুলে দিয়ে বললেনঃ যে স্থানে এই মাটির "স্বাদ" "গন্ধ" ও "বর্ণের" মিল এক হবে, সেখানেই ধর্ম প্রচারের জন্য আস্তানা গড়বে। মুর্শিদ সৈয়দ আহমদ কবির (রহ) এর দোয়া নিয়ে শাহ জালাল (রহ) ধর্মপ্রচার অভিযানে আরবের মক্কা শরিফ হতে একা-একাই যাত্রা শুরু করেন।
শাহ জালাল রহ: মক্কা হতে বিদায় কালে যে কয়েক জন সঙ্গী তাঁর সাথে যাত্রা করেন তাদের মধ্যে প্রধান ছিলেন হাজী ইউসুফ, হাজী খলীল, হাজী দরিয়া এবং আরেকজন সঙ্গী চাশনী পীর ছিলেন মৃত্তিকার তহবিলদার। হিন্দুস্থানে আসার পূর্ব পর্যন্ত সমরবান্দ থেকে সৈয়দ ওমর, রোম থেকে করিমদাদ, বাগদাদ থেকে নিজাম উদ্দীন, ইরান, জাকারিয়া ও শাহ দাউদ এবং সৈয়দ মুহম্মদ প্রমুখ তার অনুগামী হলেন। তাদের নিয়ে তিনি হিন্দুস্থানে প্রবেশ করলেন। এরপর সুলতান থেকে আরিফ, গুজরাট থেকে জুনায়েদ, আজমীর শরীফ থেকে মুহম্মদ শরীফ, দাক্ষিণাত্য থেকে সৈয়দ কাসিম, মধ্যপ্রদেশের হেলিম উদ্দীন প্রমুখ তার মুরীদ হয়ে তাঁর সঙ্গে সঙ্গে চললেন। এভাবে দিল্লী পর্যন্ত এসে পৌঁছালেন তখন শিষ্যদের সংখ্যা ২৪০ জন বলে ধারণা পাওয়া যায়।
দিল্লিতে আসার পর নিজামুদ্দিন আউলিয়ার জনৈক শিষ্য গুরুর কাছে শাহ জালালের কুত্সা প্রচার করে। সঙ্গে সঙ্গে নিজাম্মুদ্দীন অন্যের কুত্সা রটনাকারী এ শিষ্যকে উপযুক্ত শাস্তিস্বরূপ দরবার থেকে তাড়িয়ে দেন এবং অন্য দুই শিষ্যকে ডেকে তাদের মারফতে শাহ জালালের কাছে সালাম পাঠান । শাহ জালাল সালামের উত্তরে উপটৌকনস্বরূপ ছোট একটি বাক্সে প্রজ্জলিত অঙ্গারের মধ্যে কিছু তুলা ভরে নিজামুদ্দীন আউলিয়ার নিকট পাঠান। নিজামুদ্দিন আউলিয়া হযরত শাহ্ জালালের আধ্যাত্মিক শক্তির পরিচয় পেয়ে তাঁকে সাদরে সাক্ষাতের আমন্ত্রণ জানান। বিদায়কালে প্রীতির নিদর্শনস্বরূপ নিজামুদ্দিন আউলিয়া তাঁকে এক জোড়া সুরমা রঙের কবুতর উপহার দেন। মাজার সংলগ্ন এলাকায় সুরমা রঙের যে কবুতর দেখা যায় তা ঐ কবুতরের বংশধর। যা জালালী কবুতর নামে খ্যাত।
ঐতিহাসিক গ্রন্থের বর্ণনা অনুসারে তুর্কি বিজয়ের মধ্য দিয়ে শ্রীহট্টে মুসলমান জনবসতি গড়ে ওঠে ছিল । সিলেটের টুলটিকর মহল্লায় ও হবিগঞ্জের তরফে তত্কালে মুসলমানরা বসতি গড়েছিলেন। এ সময় শ্রীহট্টের গৌড় রাজ্যে গৌড়-গোবিন্দ নামে এক অত্যাচারী রাজা ছিল। গৌড় রাজ্যের অধিবাসী বুরহান উদ্দীন নামক জনৈক মুসলমান নিজ ছেলের জন্মোত্সব উপলক্ষে গরু জবাই করে গৌড়ের হিন্দু রাজা গৌড় গোবিন্দের কাছে অপরাধী সাব্যস্ত হন। এ কারণে, গোবিন্দ বুরহান উদ্দীনের শিশু ছেলেকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। বুরহান উদ্দীন বাংলার তত্কালীন রাজা শামস উদ্দীন ফিরুজ শাহের নিকট গিয়ে এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ করলে রাজা তাঁর ভাগিনেয় সিকান্দর গাজীকে প্রকাণ্ড সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে শ্রীহট্টের গৌড় রাজ্যে প্রেরণ করেন। শাহী সৈন্য যখন ব্রহ্মপুত্র নদী পার হতে চেষ্টা করে তখনই রাজা গোবিন্দ ভৌতিক শক্তির সাহায্যে মুসলিম সৈন্যের উপর অগ্নিবাণ নিক্ষেপ করে সমস্ত চেষ্টাকে বিফল করে ফেলে। গোবিন্দের ঐন্দ্রজালিক শক্তির প্রভাবে সিকান্দর গাজীর প্রতিহত ও বিফল মনোরথের সংবাদ দিল্লীর সম্রাট আলাউদ্দীন খিলজীর নিকট পৌঁছলে সম্রাট এ সংবাদে মর্মাহত হন। পরবর্তিতে সম্রাট তাঁর রাজদরবারী আমেল-উলামা সহ জ্যোতিষিদের সাথে আলোচনায় এই মর্মে অবহিত হন যে, সুলতানের সেনাবাহিনীতে আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন এক ব্যক্তি রয়েছে, তাঁর নেতৃত্বে অভিযান প্রেরণ করা হলে গৌড়গোবিন্দের যাদু বিদ্যার মোকাবেলা করে সিলেট বা শ্রীহট্ট জয় সম্ভব হবে। জ্যোতিষিরা উক্ত আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তির পরিচয়ের পন্থা হিসেবে এও বলে ছিল, আগামী দুই/এক রাত্রের মধ্যে দিল্লী নগরীতে প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টিতে সমস্ত নগরী ভেসে যাবে, প্রতিটি ঘর বাড়ির বিষম ক্ষতি লক্ষিত হবে, কোথায় কোন প্রদীপ থাকবে না; একটি মাত্র তাবু ব্যতীত। সম্রাট জ্যোতিষিদের কথামত অনুসন্ধান করে সেই ঝড় বৃষ্টির রাতে দেখতে ফেলেন একজন সাধারণ সৈনিক একটি তাঁবুতে একাগ্র মনে বসে কোরান পড়ছেন। সম্রাট সেখানে উপস্থিত হয়ে তাঁর সব বিষয় অবগত হয়ে সিলেট অভিযানের নেতৃত্ব দেয়ার অনুরোধ জানান। তিনি সৈয়দ নাসির উদ্দীন সম্রাটের আদেশে সম্মত হলে সম্রাট তাঁকে সিপাহসালার সনদ প্রদানের মাধ্যে সিকান্দর গাজীর কাছে প্রেরণ করেন। এদিকে গাজী বুরহান উদ্দীন তখন দিল্লীতে অবস্থান করছিলেন। এসময় শাহ জালালও তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে দিল্লীতে আসেন । ঐতিহাসিক আজহার উদ্দীন ধরণা করে দিল্লীতেই বুরহান উদ্দীনের সাথে শাহ জালালের সাক্ষাৎ হয় এবং এখানেই বুরহান উদ্দীন নিজের দুঃখময় কাহিনী তাঁর নিকট বর্ণনা করেন । শাহ জালাল দিল্লী হতে বুরহান উদ্দীনকে সহ ২৪০ জন সঙ্গীসহচর সিলেটের উদ্দেশ্য রওয়ানা হলেন । শাহ জালাল সাতগাঁও এসে ত্রিবেণীর নিকট দিল্লীর সম্রাট প্রেরিত অগ্রবাহিনী সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীনের সাথে মিলিত হন। সৈয়দ নাসির উদ্দীন শাহ জালাল সম্পর্কে অবগত হয়ে তদীয় শিষ্যত্ব গ্রহণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। পথে পথে শাহ জালালের শিষ্য বর্ধিত হতে লাগল । ত্রিবেণী থেকে বিহার প্রদেশে আসার পর আরো কয়েকজন ধর্মযোদ্ধা অনুষঙ্গী হলেন। যাদের মধ্যে হিসাম উদ্দীন, আবু মোজাফর উল্লেখযোগ্য। এখান থেকে সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দ্দীনের আনিত এক হাজার অশ্বারোহী ও তিন হাজার পদাতিক সৈন্যসহ শাহ জালাল রহ:নিজ সঙ্গীদের নিয়ে সোনারগাঁ অভিমুখে সিকান্দর গাজীর সাথে মিলিত হওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।
শাহ জালাল রহ: সোনারগাঁ আসা মাত্রই শাহ সিকান্দর গাজীর সাথে সাক্ষাৎ ঘটিল। সিকান্দর গাজী শাহ জালালকে সসম্মানে গ্রহণ করলেন । শাহ জালাল তাঁর সঙ্গী অনুচর ও সৈন্যসহ শাহ সিকান্দরের শিবিরে সমাগত হয়ে সিকান্দর হতে যুদ্ধ বিষয়ে সব বিষয় অবগত হন। সিকান্দর শাহ জালালের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শিষ্যগ্রহণপূর্বক সিলেট অভিমুখে যাত্রা করলেন। এভাবে শাহ জালালের শিষ্য সংখ্যা বেড়ে ৩৬০ জনে পৌঁছায়। এদিকে গৌড় গৌবিন্দ নিজস্ব চর দ্বারা শাহ জালালের সমাগম সংবাদ পেয়ে; নতুন এ দল যাতে ব্রহ্মপুত্র নদী পার না হতে পারেন, সে জন্য নদীর সমস্ত নৌ-চলাচল বন্ধ করে দেয়। শাহ জালালের ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে, তিনি তাঁর শিষ্যদের নিয়ে বিনা বাধায় জায়নামাজের সাহায্যে ব্রহ্মপুত্র নদী অতিক্রম করেন। খ্রিস্টিয় দশম শতকে শ্রীহট্টভূমি লাউড়, জয়ন্তীয়া ও গৌড় নামে তিনটি স্বাধীন রাজ্যে বিভক্ত ছিল। উক্ত রাজ্য গুলোর মধ্যে গৌড় অন্যতম রাজ্য হিসেবে বিবেচিত ছিল। এ রাজ্যে প্রাচীন সীমা রেখা বর্তমান মৌলভীবাজার জেলা সহ হবিগঞ্জ জেলার কিয়দংশ নিয়ে বিস্তৃত থাকায় গৌড় রাজ্যের দক্ষিণ সীমাভূমি নবীগঞ্জের দিনারপুর পরগণার পাশে রাজা গোবিন্দের চৌকি ছিল। শাহ জালাল তাঁরসঙ্গীদের নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদী পার হয়ে প্রথমত সেখানে অবস্থান করেন। এখানে গৌড়ের সীমান্ত রক্ষীরা অগ্নিবাণ প্রয়োগ করে তাদেরকে প্রতিহত করতে চায়; কিন্তু মুসলমান সৈন্যের কোন ক্ষতি করতে পারেনি। গোবিন্দ সমস্ত বিষয় অবগত হয়ে উপায়ান্তর না পেয়ে বরাক নদীতে নৌকা চলাচল নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে। শাহ জালাল পূর্বের মতো জায়নামাজের সাহায্যে বরাক নদী পার হন। বরাক নদী পারাপারে বাহাদুরপুর হয়ে বর্তমান সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলায় ফতেহপুর নামক স্থানে রাত্রিযাপন করেন। সর্ব প্রকার কলাকৌশল অবলম্বন করে রাজা গৌড়গোবিন্দ যখন দেখলেন সকল প্রয়াসই বিফলে হচ্ছে, তখন শেষ চেষ্টা করার লক্ষে যাদুমন্ত্রসহ এক প্রকাণ্ড লৌহধনুক শাহ জালালের কাছে প্রেরণ করে; যার শর্ত ছিল যদি কেহ একা উক্ত ধনুকের জ্যা ছিন্ন করতে পারে তখন গোবিন্দ রাজ্য ছেড়ে চলে যাবে। শাহ জালাল তাঁর দলের লোকদের ডেকে বললেন, যে ব্যক্তির সমস্ত জীবনে কখনও ফজরের নামাজ খাজা হয়নি বা বাদ পড়েনি একমাত্র সেই পারবে গোবিন্দের লৌহ ধনুক "জ্যা" করতে। অতপর মুসলিম সৈন্যদলের ভেতর অনুসন্ধান করে সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দীনকে উপযুক্ত পাওয়া গেল এবং তিনিই ধনুক জ্যা করলেন। উত্তর-পূর্ব ভারতের বরাক নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করার সময় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে বিভক্ত হয়ে যায়। সিলেট বিভাগের বেষ্টনী হিসেবে ধর্তব্য এ নদীগুলো প্রাচীন কালে প্রবল স্রোতে প্রবাহিত হত। বর্ষাকালের দৃশ্য প্রায় সাগরের মত দেখাতো। ঐতিহাসিক পর্যটক ইবন বতুতা সুরমা নদীকে নহরি আজরফ বলে আখ্যায়িত করেছেন । শাহ জালাল ফতেপুর হতে যাত্রা করে যখন সুরমা তীরে অবস্থান নিলেন, এ নদী পার হয়েই গৌড়ের রাজধানী। শাহ জালাল আউলিয়ার কেরামতি ও আলৌকিক বিভিন্ন ঘটনায় রাজা গোবিন্দ বীতশ্রদ্ধ হন। গোবিন্দ শক্রবাহিনীকে কিছু সময় ঠেকিয়ে রাখার জন্য সুরমা নদীতে নৌকা চলাচল নিষিদ্ধ করেন। তা সত্ত্বেও শাহ জালাল রহ: নদী পার হন।
শাহ্‌ জালাল বিসমিল্লাহ বলে সকল মুরিদকে নিয়ে জায়নামাজে করে, অনায়াসে গেলেন চলে নদীর ওপারে।
গোবিন্দ গড়দুয়ারস্থিত রাজবাড়ি পরিত্যাগ করে পেচাগড়ের গুপ্তগিরি দুর্গে আশ্রয় নেন। এরপর থেকে তার আর কোন হদিস মেলেনি। শাহ জালাল রহ: তিন দিন সিলেটে অবস্থান করার পর, মিনারের টিলায় অবস্থিত রাজবাড়ি প্রথমে দখল নিলেন।
গৌরগোবিন্দের মুসলিম নির্যাতনের কথা জানতে পেরে বাংলার তৎকালীন সুলতান ফিরজ শাহ গৌরগোবিন্দের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন, কিন্তু প্রথম অভিযান ব্যর্থ হলে ফিরজ শাহ সিকান্দার শাহের সহযোগিতা নিয়ে নাসির উদ্দীন নামের একজন সেনাপতিকে তার বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। এই সময় শাহজালাল তাঁর সেনাবাহিনীসহ সোনারগাঁয়ে অবস্থান করছিলেন; এই উভয় বাহিনী শাহজালালের নেতৃত্বে গৌরগোবিন্দের বিরুদ্ধে অভিযান করেন এই খবর শুনে গৌরগোবিন্দ পলায়ন করেন।
দীর্ঘ সাধক জীবন শেষে সিলেটেই ওনার মাজার হয়।৭৪০ হিঃ ১৩৪১ ইং সালে।

★বিভিন্ন গ্রন্থ সূত্র

সাধকের জীবন ও কর্ম (২০)
short edition

মহাত্মা সির্দি সাই মানুষের কাছে প্রচার করতেন যে-"সবার ভগবান একজনই"
নানুবলি নামে এক ভক্ত বলেছিল- সবার ভগবান যদি এক হয় তবে রাম- কৃষ্ণা মহাদেব এরা কারা? তখন সির্দি সাই বলেছিল-দেখো পানি কে কেউ জল বলে কেউ ওয়াটার, এক এক ভাষায় একেক রকম কিন্তু জিনিসটাতো এক। সব কিছুর উৎস এক একই স্থান হতে হয় সবকিছুর আবির্ভাব।

ভক্ত কবীর

একদা রামভক্ত ভক্ত কবীর তাঁর ব্যাবসার কাজে এক দোকানীর বাসায় দাওয়াত নিলেন। দেখলেন সারি সারি  শ্রী  রাম কৃষ্ণের মূর্তি সাজানো। কবীর ধরে ধরে মূর্তিগুলোর ওজন বললেন। দোকানী রেগে বললেন- ছুঁয়ে দিলেতো সব শেষ করে। কবীর বলল- মূর্তি পূজার কী প্রয়োজন? দোকানী রাগী কন্ঠে বলল তুমি চলে যাও তোমার দেনা-পাওনা নিয়ে। তুমি আমার ধর্ম নিয়ে উল্টো -পাল্টা কথা বলছো।কবীর বলল -কেউ ছুঁয়ে দিলে যদি ভগবান অস্পৃশ্য বা নাপাক হয়ে যান তবে সে ভগবানের পূজো করে কী লাভ।রাম- কৃষ্ণ আমার এ হৃদয়ে থাকেন বরং সবার মাঝেই থাকেন কোন স্পর্শেই তারা নাপাক হন না। সকল ভক্তের মাঝেই থাকেন। যখন রামের সাথে গভীর সম্পর্ক হয়ে যায় তখন মূর্তি বা মুরদ হৃদয়ে প্রতিস্থাপন হয়ে যায় -মাটির মূর্তির তখন মূল্য থাকেনা।
পরিশেষে দোকানী কবীরের খুব ভক্ত হয়ে গেলো এবং বুঝতে পারল তাঁর কথার মর্মার্থ।


★ মুসলিম মোল্লারা কবীরকে কাফের বলত মুসলমান হয়ে রামভক্ত বিধায় এবং হিন্দুরা বলত যবন।  কবীর বলত না আমি হিন্দু না মুসলমান। আমার ধর্ম প্রভূর চাওয়া কে পূর্ণ করা।
একদিন কবীর ব্রাহ্মনদের সাথে গাছের নীচে বসে আলাপ করছিল সেই সময়
মৌলভী সাহেব এসেই বলছেন --আজ তোমার সম্পর্কে ফয়সালা করেই ফেলতে হবে।
কবীর হাঁসিমুখে বলল-আমার ফয়সালা কী আবার? আপনি কেন এসেছেন বলুন দয়া করে?
মৌলভী সাহেব বললেন-প্রতিদিন এভাবে কাফেরদের সাথে বসে ভ্রান্ত আলোচনা করা তোমার ঠিক নয়।
কবীর বলল-আপনি ও বসুন সেই আলোচনাই করব না হয়।কাফেরতো সেই যে প্রভূর সাথে মিলনের ইচ্ছা রাখেনা।হোক সে মুসলিম ব্রাহ্মন আর জৈন।
মৌলভী সাহেব বলল-বসার জন্য আসি নাই এখানে। তুমি আযান শোন নাই?নামাজে মসজিদে আসোনা কেন?
কবীর বলল-আপনিতো কোরআন পড়েছেন তবুও বলছি শুনুন-কোরআনে নামাজ সম্পর্কে চলতে ফিরতে সওয়ারী করার সময়ও করা যায় বলে উল্লেখ আছে যাকে দায়েমী সালাত বলে। আমি তাই করছি। মৌলভী জ্বী আপনি চিৎকার করে সুমধুর কন্ঠে মানুষকে পথে আনার জন্য ওয়াজ করেন বলুনতো আত্মশুদ্ধি ছাড়া আপনার সে এবাদত কবুল হয় কিনা? আত্মশুদ্ধির পর শরীয়তের হুকুম পালন করতে কোন অসুবিধে নেই।
মৌলভী সাহেবতো ক্ষেপে গেলেন গালি দিয়ে বললেন রোজা আসছে তোমার রোজা রাখা লাগবে।
কবীর বললেন -আমিতো আপনার মতো রোজা রাখিনা। সারাদিন রোজা রেখে সন্ধ্যা হলেই ইফতারে বাহারী খাবার নিয়ে বসে পড়েন। এইকি রোজা?
ব্রাহ্মণরা খুব খুশী স্বজাতিদের কবীর ভাল শায়েস্তা করলেন তাই।
যখনই বলল প্রত্যেক ধর্মেই খারাপ ভাল আছে। মুখটা ওদেরও একটু বাকাঁ হয়ে গেল।
ওরা বলল কী বললে তুমি আমাদের ধর্মেও দূর্বলতা আছে আমাদের।
কবীর বলল হ্যাঁ ওরাতো সারা মাস রোজা রাখে আপনারাতো বছরে ২৪ একাদশী তে ব্রত পালন করেন।ওরা রোজা রেখে উদরপূর্তি করে খায় যেন পেট ফাটার অবস্থা;আর আপনারা একাদশীর সময় তিনদিন পর্যন্ত চলে বাহারী খাওয়া-দাওয়া। মৌলভী আর ব্রাহ্মনেরা কবীরকে তিরস্কার করে চলে গেল।

বন্ধুরা আপনাদের জন্য কবীর মেসেজ এই রাখল যে, পরিশুদ্ধ হলে পড়েই আপনার এবাদত প্রভূর দরবারে কবুল হবে যাকে নবীপাক হুজুরী ক্বলব বলেছেন। আসুন সবাই আমরা সম্যকগুরুর মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির পথ বেছে নেই।

انوارحُسَين‎
Writter By Md Anwar Hossain

Comments

  1. Alhamdulillah besh torth somvirdho article,asha korchi emon jukti khondhoniy ebong torth bohul etihaser khondho chitro amader jibone Pother pathoy hoye anabil sombirdhi voye anbe.

    ReplyDelete
    Replies
    1. খুব ভাল লাগল শিখলাম জানলাম অনেকিছু।

      Delete
  2. অনেক ভালো লাগলো

    ReplyDelete
  3. খুব ভাল লাগল, অনেক কিছু শিখলাম।

    ReplyDelete
  4. খুব ভাল লাগল, অনেক কিছু শিখলাম।

    ReplyDelete
  5. সুন্দর পোস্ট।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

গুরু শিষ্য

প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যাঁর নিকট থেকে নিজের মনের অন্ধকার দূর করে আলোকিত হওয়ার জন্য ভজন বিষয়ে যা কিছু শিক্ষা করা যায় তিনিই গুরু।                                          "গুরু গোবিন্দ দোউ খড়ে,কিনকে লাগুঁ পায়,                                           বলিহারী গুরুদেব কী,গোবিন্দ দিয়ো বাতায়।।                          বিখ্যাত এ দোহাটি দিয়ে শুরু করলাম আমার গুরুশিষ্য লেখাটির প্রথম পর্ব। গুরুর চমৎকারিত্ব তখনই, যখন তিনি গোবিন্দকে পরিচিত করিয়েছেন,তাঁকে সামনে এনে দ...

জমি সংক্রান্ত কিছু বিষয় জেনে নিন

খতিয়ানঃ মৌজা ভিত্তিক এক বা একাধিক ভূমি মালিকের ভূ-সম্পত্তির বিবরণ সহ যে ভূমি রেকর্ড জরিপকালে প্রস্ত্তত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। এতে ভূমধ্যাধিকারীর নাম ও প্রজার নাম, জ...