Skip to main content

সাধকের জীবন ও কর্ম (পর্বঃ২১)

হযরত সুফিয়ান সওরী (রহঃ) যখন মায়ের গর্ভে তখন তার মা এক প্রতিবেশিনীর খাবার পাত্রে বিনা অনুমতিতে আঙ্গুলের ডগা দিয়ে কোনও খাদ্যবস্তুর স্বাদ নিলেন, সাথে সাথে তার গর্ভস্থ সন্তান কেঁপে উঠল। অথচ মা ছিলেন বুদ্ধিমতি ও ধর্মভীরু। তিনি বুঝতে পেরে প্রতিবেশিনীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেন। কাঁপুনি থেমে গেল। এ গর্ভস্থ সন্তান বড় হয়ে হলেন বিখ্যাত সাধক।

হযরত সুফিয়ান
সাওরী (রহঃ) ঊনিশ বছর পর ঘরে ফিরে এসেছেন। সেই মা ও কেমন ছিলেন ! ঘরে
ফিরেছেন রাতের বেলা। দরজায় কড়া নেড়েছেন । মাকে আল্লাহ হায়াত দিয়েছিলেন । মা জীবিত ছিলেন। ভিতর থেকে বললেন কে ? বললেন তোমার পুত্র সুফিয়ান। মা বললেন বাবা কাউকে কোনো জিনিস উপহার দিয়ে তা ফিরত নেওয়া খুবই অপমানের বিষয়। আমি তো তোমাকে
আল্লাহ কে দিয়ে দিয়েছি।তোমাকে ফিরিয়ে নেওয়া বড়ই অপমানের বিষয় মনে হচ্ছে। তোমার জন্য এই দুনিয়াতে আমি দরজা খোলবো না। ফিরে যাও, কেয়ামতের দিন সাক্ষাৎ হবে। সেই
দিনই সান্ত্বনা লাভ করবো। মা দরজা খোলেন নি সুফিয়ান সাওরী (রহঃ) ফিরে গেছেন ।

উনি বলতেন
★একমাত্র আল্লাহই আরেফকে মারেফত, আবেদকে নৈকট্য, আর হাকিম কে হেকমত প্রদাণ করেন।
★ ক্রন্দন দশ প্রকারের,  তার মধ্যে নয় প্রকারেরই রিয়া।
★পূণ্যবানরা পূণ্য কর্ম করে যদি অহংকার প্রকাশ করে তবে তার নাম রিয়াকারদের দপ্তরে লিখিত হয়।
★ যার মধ্যে ইয়াকীন থাকে সে মারেফত হাছিল করতে পারেন। আর ইয়াকীন বলতে তিনি বুঝতেন ক্বালবী আওয়াজ।

জীবে দয়া
-------------
সুফিয়ান সওরী (রহঃ) মৃত্যুর দিন সবাই এক অদৃশ্য শব্দ শুনতে পান। মাতাল ওয়ারা - মাতাল ওয়ারা অর্থাৎ পরহেজগার ব্যাক্তির মৃত্যু হয়েছে।।
খুব দয়ালু দাতা ছিলেন সুফিয়ান সওরী (রহঃ)। পশুপাখীর প্রতিও দয়াদ্র চিত্ত ছিলেন। একদিন বাজারে খাঁচায় বন্দী একটি পাখী দেখতে পান। বাইরে বেরোবার জন্য ছটফট করে। তাঁর কোমল হৃদয় কেঁদে উঠে।
তিনি তখনই পাখীটিকে কিনে নিয়ে আকাশে ছেড়ে দিলেন। পাখিটি তার বাড়িতে আসা যাওয়া করত।তিনি নামাজে দাঁড়ালে এক দৃষ্টিতে  তাকিয়ে থাকত। কখনও কখনও তাঁর গায়ের উপর গিয়ে বসতো। যখন তিনি দুনিয়া হতে বিদায় নিলেন। উনার খাটের উপরেই পাখিটি কবরস্থান পর্যন্ত গেলো। প্রতিটি মানুষ পাখিটির ছটফট দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।
সমাধিস্থ হওয়ার পর গায়েব হতে সুফিয়ান সওরী বলতে লাগলেন,  আমি জীবে দয়া করতাম বলে আল্লাহ আমাকে দয়া করেছেন।

আজ এ পর্যন্তই......

  A N W A R

Comments

Popular posts from this blog

গুরু শিষ্য

প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যাঁর নিকট থেকে নিজের মনের অন্ধকার দূর করে আলোকিত হওয়ার জন্য ভজন বিষয়ে যা কিছু শিক্ষা করা যায় তিনিই গুরু।                                          "গুরু গোবিন্দ দোউ খড়ে,কিনকে লাগুঁ পায়,                                           বলিহারী গুরুদেব কী,গোবিন্দ দিয়ো বাতায়।।                          বিখ্যাত এ দোহাটি দিয়ে শুরু করলাম আমার গুরুশিষ্য লেখাটির প্রথম পর্ব। গুরুর চমৎকারিত্ব তখনই, যখন তিনি গোবিন্দকে পরিচিত করিয়েছেন,তাঁকে সামনে এনে দ...

সাধকের জীবন ও কর্ম (১১-২০ পর্ব)

সাধকের জীবন ও কর্ম (পর্ব:১১) -------------------------------------------- হযরত হাসান বছরী রহ: বলেন, আমি চারটি লোকের নিকট খুবই অপ্রস্তুত হয়েছি ও কিছুু শিক্ষা অর্জন করেছি।‎তাদের একজন হিজরা,দ্বিতীয়জন মাতাল, তৃতীয়জন বালক এবং চতুর্থজন একটি মহিলা। কীভাবে তা বলছি - (ক) একদা আমি একটি হিজরা (নপুংসক) লোকের পরিহিত কাপড় ধরে আকর্ষণ করায় ‎সে বলল,জনাব! আমার গোপন রহস্য বাইরে এখনো প্রকাশ পায়নি আপনি কি তা প্রকাশ করে দিতে চান? তৎক্ষণাত প্রভূর গোপন থাকার বিষয় আমার অন্তরকে প্রভাবিত করে। (খ)একদা একটি মদখোর মাতাল অবস্থায় হেলে-দুলে পথ চলছে। আমি তাকে বললাম, পথ পিচ্ছিল কিন্তু সাবধানে পা ফেল,নইলে আছাড় খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে জবাবে বলল,তুমি তোমার পা দুটোকো ঠিকভাবে ফেলে চলো। আমি তো মাতাল মানুষ, আছাড় খেলে কিন্তু ক্ষতি হবেনা। নিজের কাপড়ে ময়লা লাগলে তা ধুয়ে পরিষ্কার করে নেব। কিন্তু তুমি বড় এক আউলিয়া, তোমার শিষ্য - সাগরেদের অভাব নেই। তারা তোমার উপরেই ভর করে চলে। যদি চলার পথে তুমি কুপোকাত হও তবে তোমার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সবারই এক অবস্থা হবে। কাজেই আমার চাইতে পথ চলার ক্ষেত্রে তোমার দ্বায়িত্ব অনেক বেশী। (গ) একদা একট...

জমি সংক্রান্ত কিছু বিষয় জেনে নিন

খতিয়ানঃ মৌজা ভিত্তিক এক বা একাধিক ভূমি মালিকের ভূ-সম্পত্তির বিবরণ সহ যে ভূমি রেকর্ড জরিপকালে প্রস্ত্তত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। এতে ভূমধ্যাধিকারীর নাম ও প্রজার নাম, জ...