Skip to main content

জন্মান্তরবাদ-৩

জন্মান্তরবাদ অত্যন্ত সূক্ষ এবং চিরন্তন একটা বিষয় কিন্তু এই চিরন্তন সত্যটাকে হিন্দু সমাজ পুরোপুরি মানলেও ;আমাদের মুসলিম সমাজেরর আংশিক লোক মেনে থাকি। মূলত গুরুবাদীরা মেনে থাকি। অধিকাংশ মানুষ না মানার কারন গবেষণায় আলসেমী। আগ্রহের অভাবেই আমরা সত্যকেও জানতে পারিনা। শোনা কথার উপর আমরা আমল বেশী করি। আমরা জন্মান্তরবাদকে মুসলিম সমাজে পুনরুত্থান, হিন্দু সমাজে পুনর্জন্ম। আক্ষরিক অর্থে পুনর্জন্ম কথাটা ভুল। কেননা আমি এ শরীর নই, আর রুহ্ বারবার সৃষ্টি হয়না। সকল রুহকে একসাথে তৈরি করেই বারি তায়ালা আলমে আরওয়াহ্ তে রেখেছিলেন।
কিন্তু পঞ্চভৌতিক এ দেহ মৃত্যুর পর লয় হয়ে যায়। আবার যখন আসব দয়াল নবীপাকের কথা মত স্বভাব সুরত নিয়েই আসব কর্ম গুণে যা তৈরি করে রেখেছি। তাই আমি বলব রুহের এটা পুনরাগমন বলা যেতে পারে। পুনরুত্থান বলি অর্থভেদ বুঝিনা আমরা। পুনরুত্থান মানে পুনরায় যা উত্থান। খেয়াল রাখবেন যেখানে পতন নেই সেখানে উত্থান নেই। ওতপ্রোতভাবে জড়িত শব্দটি।
অনেকেই আমার কাছে দলীল চেয়েছেন নিন্মে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এক বন্ধুর সাথে আমার কথোপকথন জন্মান্তরবাদ নিয়ে। একটি ছোট ছেলে পঙ্গু আরেকজন অন্ধ লোক দেখে বন্ধু আমার আফসোস করছে আর বলছে -
    দোস্ত এমন কেন হয়রে?
    দোস্ত কর্মফল।
    কে বলছে তোরে কর্মফল?
    তা নয়তো কি?
    বন্ধু বলল। এটা ওর জন্য পরীক্ষা।
    আমি বললাম।কিসের পরীক্ষা শালা? ও এখনও বালেগ হয় নাই। তোদের কথামত শরীয়তে বালেগ হওয়ার আগ পর্যন্ত শরীয়তের হুকুম আহকাম তার উপর ফরজ হয়না। সে হিসেবে এই ছোট ছেলেকে পরীক্ষা নেয়াতো অবিবেচকের কাজ হবে। আমার আল্লাহ তো অবিবেচক হতে পারেন না তিনি সুবিচারক। সকল ক্ষমতার মালিক। আর পরীক্ষা নেয়ার আগে লেখাপড়ার তো প্রয়োজন হয়, এমনকি প্রশ্নপত্র সবার এক হওয়া উচিত। নইলে তো দোস্ত স্বজনপ্রীতি হবে। কি বলিস?  মহান আল্লাহ রাব্বুল তা করতে পারেন না।
    নাহ্ তাতো না। হতে পারে বাবা মার ভুলের কারনে শাস্তি পাইছে।
    এটা কি বললি? পবিত্র কুরআনের আল ইসরা (১৭/১৫) তে বলেন একজনের শাস্তি অন্যজনকে দেয়া হয়না।
     তুই কি বলতে চাস? এতোদিন যা জানলাম সব ভুল? ধর্মের বাইরে কথা বলব না দোস্ত।
     আমি বললাম। আমিতো তোকেই জিজ্ঞেস করলাম। তোর কথার জবাব দিলাম মাত্র। ধর্মের বাহিরে কিছুই নেইরে দোস্ত। আমরা উপলব্ধি করতে পারিনা।
     তোর কথার স্বপক্ষে কোন দলীল আছে?
     তোদের সমস্যা একটাই কথায় কথায় দলীল খুঁজিস। আত্মজ্ঞান অর্জনের চেষ্টা নেই। দলীল দিলে বলবি এটা এভাবে না ওভাবে। তোর দলীল দরকার পড়ে নেই আমরা।

১) আল্লাহ তায়ালা বলেন "কিরূপে তোমরা আল্লাহকে অবিশ্বাস করছ? অথচ তোমরা মৃত ছিলে, অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে জীবিত করেছেন, পুনরায় তিনি তোমাদেরকে  মৃত করবেন এবং পুনরায় তোমাদেরকে জীবিত করা হবে। তারপর তোমারা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করবে।"  (আল বাকারাহ্-২:২৮)

২) অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন: (হে নবী) তুমি বলঃ তোমাদের (নিরূপিত) শরীকদের মধ্যে এমন কেহ আছে কি যে প্রথমবারও সৃষ্টি করে এবং পুনরাবর্তন করতে পারে? তুমি বলে দাওঃ আল্লাহই প্রথমবারও সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনিই পুনর্বারও সৃষ্টি করছেন, অতএব তোমরা (সত্য হতে) কোথায় ফিরে যাচ্ছ?  (সূরা ইউনুস:১০:৩৪)

৩) আল্লাহ বলেন "তিনিই মৃত হতে জীবন্তের এবং জীবন্ত হতে মৃতের আবির্ভাব ঘটান এবং ভূমির মৃত্যুর পর ওকে পুনরুজ্জীবিত করেন। এভাবেই তোমরা প্রত্যাবর্তন করবে।  (সূরা রুম ৩০:০৯)

৪) অন্য আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলছেন যে, "তারা কি লক্ষ্য করে না যে, কিভাবে আল্লাহ সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করেন? অতঃপর পুনরায় সৃষ্টি করবেন।"  (আনকাবুত ২৯:১৯)।

৫) অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ বলেন' (হে নবী) আপনি বলুনঃ তোমাদেরকে প্রথম যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে, তোমরা তেমনিভাবে ফিরে আসবে।  (আল আরাফ ৭:২৯)

৬) অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ “যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টি করেছি সেভাবেই আমি সেটার পুনরাবর্তন ঘটাব”। [সূরা আল-আম্বিয়া: ১০৪]

৭) "কিয়ামতের দিন মানুষকে উলঙ্গ পদে, উলঙ্গ দেহে ও খাতনাহীন অবস্হায় কবর থেকে হাশরের ময়দানে একত্রিত করা হবে ।" (বোখারী-মুসলিম ।)

৮) আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে বলেনঃ "তোমাদের সকলকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে, আল্লাহর ও‘য়াদা সত্য; নিশ্চয়ই তিনিই প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনিই পুনর্বার সৃষ্টি করবেন, যাতে এরূপ লোকদের যারা ঈমান এনেছে এবং ভাল কাজ করেছে তাদেরকে ইনসাফ মত প্রতিফল প্রদান করেন; (ইউনুস ১০:০৪)

৯) আল্লাহ বলেনঃ 'তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তাতো তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল।' (আশ শূরা ৪২:৩০)

১০) অ হুয়াল্লাজী...তাআলামুন [৬: আনআম-৬০] অর্থ: তিনিই রাত্রিকালে তোমাদের মৃত্যু ঘটান; -অতঃপর দিনে তোমাদের পুনর্জাগরিত করেন, যাতে নির্ধারিত কাল পূর্ণ হয়। অতঃপর তার মধ্যেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন (প্রত্যা + আবর্তন = বিবর্তন) ...।

১১) তিনি অস্তিত্ব দান করেন ও তার পুনরাবর্তন (ঈদু = ঘুরে ঘুরে আসা অর্থাৎ বিবর্তনবাদ) ঘটান। [৮৫: বুরুজ-১৩]

১২) তিনিই তোমাদের পর্যায়ক্রমে (আত্বওয়ারা = ক্রমাগত/ক্রমে ক্রমে আগত অর্থাৎ বিবর্তনবাদ) সৃষ্টি করেন। [৭১: নূহ-১৪]

১৩) আল্লাহ সৃষ্টির সূচনা করেন অতঃপর তিনি এর পুনরাবর্তন (ঈদু = বিবর্তন অর্থাৎ জন্মান্তরবাদ) ঘটান, অতঃপর তোমরা তারই মধ্যে ফিরে যাও [২৭: নমল ৬৪; ২৯: আনকাবুত-১৯; ৩০: রূম-১১]

১৪) তোমাদের সকলের সৃষ্টি ও পুনরুত্থান (জন্মান্তরবাদ) একটি মাত্র প্রাণীর সৃষ্টি ও পুনরুত্থানেরই (জন্মান্তরবাদ) অনুরূপ। [৩১: লুকমান-২৮]

১৫) মৃত্তিকা থেকে তোমাদের সৃষ্টি করি, তাতেই তোমাদের ফিরিয়ে দিই এবং তা থেকে পুনরায় তোমাদের বের (জন্মান্তরবাদ) করি। [২০: ত্বাহা-৫৫]

জন্মান্তরবাদের ইঙ্গিত দেয়া কিছু আয়াত সমূহ-
সূরা বাক্বারা, আয়াত নং- ৫৬, ৬৫, ৭৩
সূরা নেসা, আয়াত নং- ৫৬, ১১৯
সূরা ইউনুস, আয়াত নং- ৩৪
সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত নং- ১০৪
সূরা আত-ত্বীন, আয়াত নং- ৪-৮।

মোটকথা, জন্মান্তরবাদের কথা রূপক ভাবে কোরআনের সকল জায়গায়-ই বিদ্যমান। কিন্তু, বস্তুবাদী ও মিথ্যাবাদীরা কখনোই এগুলো মানবেনা।
শার্লোট বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকার ভার্জিনিয়াতে অবস্থিত। সেখানে বিখ্যাত এক গবেষক স্টিভিন্স জন্মান্তরবাদের উপর গবেষণা করেন। স্টিভিনসের এই গবেষণা প্রকল্পে সারা পৃথিবীর সকল ধর্মাবলম্বীর ২ হাজারেরও অধিক জন্মান্তরবাদের/পূর্বজন্মের ও পুর্নজন্মের সত্য ঘটনা লিপিবদ্ধ আছে।
যার কপালে মুক্তি নেই সে আসলে মানবেনা এটাই স্বাভাবিক।

A N W A R

Comments

Popular posts from this blog

গুরু শিষ্য

প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যাঁর নিকট থেকে নিজের মনের অন্ধকার দূর করে আলোকিত হওয়ার জন্য ভজন বিষয়ে যা কিছু শিক্ষা করা যায় তিনিই গুরু।                                          "গুরু গোবিন্দ দোউ খড়ে,কিনকে লাগুঁ পায়,                                           বলিহারী গুরুদেব কী,গোবিন্দ দিয়ো বাতায়।।                          বিখ্যাত এ দোহাটি দিয়ে শুরু করলাম আমার গুরুশিষ্য লেখাটির প্রথম পর্ব। গুরুর চমৎকারিত্ব তখনই, যখন তিনি গোবিন্দকে পরিচিত করিয়েছেন,তাঁকে সামনে এনে দ...

সাধকের জীবন ও কর্ম (১১-২০ পর্ব)

সাধকের জীবন ও কর্ম (পর্ব:১১) -------------------------------------------- হযরত হাসান বছরী রহ: বলেন, আমি চারটি লোকের নিকট খুবই অপ্রস্তুত হয়েছি ও কিছুু শিক্ষা অর্জন করেছি।‎তাদের একজন হিজরা,দ্বিতীয়জন মাতাল, তৃতীয়জন বালক এবং চতুর্থজন একটি মহিলা। কীভাবে তা বলছি - (ক) একদা আমি একটি হিজরা (নপুংসক) লোকের পরিহিত কাপড় ধরে আকর্ষণ করায় ‎সে বলল,জনাব! আমার গোপন রহস্য বাইরে এখনো প্রকাশ পায়নি আপনি কি তা প্রকাশ করে দিতে চান? তৎক্ষণাত প্রভূর গোপন থাকার বিষয় আমার অন্তরকে প্রভাবিত করে। (খ)একদা একটি মদখোর মাতাল অবস্থায় হেলে-দুলে পথ চলছে। আমি তাকে বললাম, পথ পিচ্ছিল কিন্তু সাবধানে পা ফেল,নইলে আছাড় খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে জবাবে বলল,তুমি তোমার পা দুটোকো ঠিকভাবে ফেলে চলো। আমি তো মাতাল মানুষ, আছাড় খেলে কিন্তু ক্ষতি হবেনা। নিজের কাপড়ে ময়লা লাগলে তা ধুয়ে পরিষ্কার করে নেব। কিন্তু তুমি বড় এক আউলিয়া, তোমার শিষ্য - সাগরেদের অভাব নেই। তারা তোমার উপরেই ভর করে চলে। যদি চলার পথে তুমি কুপোকাত হও তবে তোমার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সবারই এক অবস্থা হবে। কাজেই আমার চাইতে পথ চলার ক্ষেত্রে তোমার দ্বায়িত্ব অনেক বেশী। (গ) একদা একট...

জমি সংক্রান্ত কিছু বিষয় জেনে নিন

খতিয়ানঃ মৌজা ভিত্তিক এক বা একাধিক ভূমি মালিকের ভূ-সম্পত্তির বিবরণ সহ যে ভূমি রেকর্ড জরিপকালে প্রস্ত্তত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। এতে ভূমধ্যাধিকারীর নাম ও প্রজার নাম, জ...