Skip to main content

ইলমে তাসাউফ

যে ব্যাক্তি নিজের অসুস্থতা সম্পর্কে উদাসীন। এবং তাঁর পরিণীতি সম্বন্ধে অজ্ঞ। তার বাড়ীর কাছে হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা না করায় তাঁর পরিণীতি কি হতে পারে। انوارحُسَين‎‎ তেমনি যে ব্যাক্তি মহান আল্লাহ পাক সম্বন্ধে জানতে না চায়, সত্যের সন্ধানী না হয়, সে কীভাবে হেদায়েত প্রাপ্ত হতে পারে? انوارحُسَين‎‎
এ সম্পর্কে আল্লাহপাকের নীতি হল:-
"যারা আমার পথে সাধনা করে নিশ্চয় তাদের আমি আমার পথ প্রদর্শন করি"(সূরা আম্বিয়া: ০৩)
আল্লাহর পথে চলার জন্য মানুষের যেসব বিষয় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ইসলামী পরিভাষায় তাকে হিজাব বলে। انوارحُسَين‎‎
এই হিজাব আবার দু প্রকার -
১) রাইনী হিজাব
২) গাইনী হিজাব

রাইনি হিজাব হল এমন এক অন্তরায় যা আপনার কর্মে লেগে গেলে সহজে তা অপসারণ হয়না।
এখানে রাইন বলতে (রং লাগা)। انوارحُسَين‎‎অন্তরে যখন এ রং লাগে সহজে খতম হয়না তাবা করে ছাড়বে আমাদের। প্রভূ রাইন শব্দটা কোরআনে বহু যায়গায় ব্যাবহার করেছেন।
আপনি আর আমি যদি নিজেরাই নিজেদের গোমরাহীর মধ্যে রাখি তখন সত্য থেকে বহু দূর অবস্থান করি তবে এই انوارحُسَين‎‎রাইনি হিজাব আমাদের ঢেকে ফেলবে। আর আল্লাহপাক আমাদের অন্তরকে বক্র করে দেবেন।
সূরা বনী ঈসরাইলে এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাইতো বলেন -"আর যখন তাঁরা নিজেরাই হীনতা অবলম্বন করেছে তখন আল্লাহ ও তাদের অন্তর কে বক্র করে দিয়েছেন। " انوارحُسَين‎‎
আর গাইনী হিজাব হল রাইনি হিজাবের ঠিক বিপরীত। এটা সাময়িক। মানুষ যখন সাধনায় আত্মনিয়োগ করে তখন এই হিজাব দূর হয়ে যায়। মানুষ যখন সত্যিকার আল্লাহ পাকের প্রতি انوارحُسَين‎‎ মনোনিবেশ করবে এবং নাফরমানি কাজ থেকে বিরত থাকবে তখন সহসাই এ হিজাব দূর হবে। তবে চেষ্টায় থাকতে হবে।
আর এজন্য প্রয়োজন মোরাকাবা মোশাহেদা বা ধ্যাণ। আর এ ধ্যাণের নিয়ম পদ্ধতি জানার জন্যে হলেও একজন মোর্শেদের কাছে যেতে হব।কেনা গাইনি হিজাব দূর করতে انوارحُسَين‎‎পারি আমরা সহজেই রাইনি হিজাব শিক্ষক ছাড়া দূর করা অসম্ভব। কেউ কেউ আজকাল বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ধ্যাণ শিক্ষা দিয়ে থাকেন। শিক্ষা করা মন্দ নয় তবে এক্ষেত্রে তরিকতের সবাই বলবে তাসাব্বুরে শায়েখ ছাড়া যত প্রকার ধ্যাণই হোক; মূল তাফাক্কুর কখনও হবেনা। প্রচলিত বিভিন্ন যায়গায় মেডিটেশন ক্লাশ করিয়ে থাকে তা শুধু আপনার চঞ্চল মনকে স্থীর করবে। انوارحُسَين‎‎ কিন্তু সে গভীরতম আহনাদ ধ্বনি শুনতে পাওয়া যাবেনা। যে ধ্বণি দাউদ আ: তাঁর বাশীতে তুলতে ব্যার্থ হয়েছিলেন।
প্রকৃতপক্ষে এ জ্ঞান কোন ক্লাশ করে পাওয়া সম্ভব না। আত্মজ্ঞানী মূর্শিদ ই সে ধ্বণি শুনিয়ে দিতে পারে আপনাকে মূহুর্তেই। সিনা টু সিনার জ্ঞান।যে গুরু দিতে না পারে তাকে বলে ছেড়ে দিন, নতুন গুরু ধরুণ যে পারে, তবে কাউকে অসম্মাণ করে নয়।
আর তাসাউফ জ্ঞান সকল মানুষের জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার। সাধু ফকির দরবেশ মহাত্ম্য তারা এ জ্ঞানের মাধ্যমেই জীবন অতিবাহিত করেছেন।
যাইহোক শেষ কথায় আসি:- انوارحُسَين‎‎
যখন মানুষ ধ্যাণ সাধনায় আত্মনিয়োগ না করবে তাঁর গাইনি হিজাবও রাইনি হিজাবে পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। আবারও বলি রাইনি হিজাব মূলত আপনার হৃদয়ে পাথরের মত অবস্থার তৈরি করে। انوارحُسَين‎‎আর গাইনি হিজাব আয়না সদৃশ্য, মরিচা ধরেছে ঘষা মাজা করলে ঠিক হয়ে যায়।
তাই বিপদ আপদে পড়লে প্রভূর দোষ না দিয়ে নিজের কর্মের দিকে খেয়াল করে আমরা আত্মজ্ঞানী মূর্শিদের মাধ্যমে সে পথে যাব যে পথে গেলে আর ফিরে আসতে আর ইচ্ছে করবেনা। ধন্যবাদ।

انوارحُسَين‎‎

মওলা আলী (আ) বলেন -তাসাউফ সৎ স্বভাবের নাম। যার চরিত্র যত উন্নত হবে, তাঁর তাসাউফ তত বৃদ্ধি পাবে।
হযরত জুনায়েদ বোগদাদী ( রহ:) বলেন তাসাউ- ফের ৮ টি নিদর্শন।
১)সাখাওয়াত(দানশীলতা):-এর উদাহরণ দেয়া যায় হযরত ইব্রাহীম (আ:) যিনি তাঁর এবং পুত্রের জীবন প্রভূকে উৎসর্গ করেছিলেন।

২)রেজা (আল্লাহর সন্তুষ্টি) :-এর উদাহরণ হযরত ঈসমাইল (আ:)। যিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আত্মোৎসর্গ করেছিলেন।

৩)সবর(ধৈর্য্য):- এর প্রতীক হযরত আইউব (আ:)। নিজের পরিবারের সকলকে চোখের সামনে ধ্বংস হয়ে যেতে দেখে এবং নিজের সর্বশরীর কীটে খেয়ে ফেলতে দেখেও কোনদিন একটুও অধৈর্য্য হননি।

৪)ইশারাত (ঈঙ্গিত):-হযরত যাকরিয়া আ: এর স্পষ্ট উদাহরণ। তিনি নির্দেশ পালনার্থে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ইঙ্গিত ইশারায় কাজ সম্পাদন করতেন।

৫)গুরবাত(অপরিচিত হওয়া):-এর উদাহরণ হযরত ইয়াহইয়া (আ:) যিনি নিজ দেশে থেকেও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সবার কাছে নিজে অপরিচিত থাকতেন।

৬)পশমী পোশাক পরিধান :- হযরত মূসা অা পশমী কাপড় পরিধান করতেন।

৭)সিয়াহাত (ভ্রমণ) :- হযরত ঈসা নবী যিনি একটি পানপাত্র আর একটি চিরুনী নিয়ে গৃহত্যাগ করেন। পথিমধ্যে একজনকে আঙ্গুল দিয়ে চুল আচড়াতে দেখে এবং দুহাতে অঞ্জলি ভরে পানি পান করতে দেখে চিরুনী আর পানপাত্র ফেলে দেন।

৮)আল ফকর (দারিদ্রতা):- এর উদাহরণ মেরী আকা মেরী মওলা হযরত মুহম্মদ (দ:)। আল্লাহ যাকে দোজাহানের বাদশাহ্ বানিয়েছেন অথচ তিনি একদিন পেট ভরে খাওয়া এবং দুদিন অনাহারে থাকাকেই  বেশী পছন্দ করতেন। এবং দরিদ্রদের সাথে হাশরের জন্য প্রভূর কাছে প্রার্থণা করতেন।
এই হল তাসাউফ অর্জনকারী ব্যাক্তির পরিচয়। আল্লাহপাক আমাদের সেই জ্ঞান এবং সে চরিত্র তৈরি করার তৌফিক দিন। আমিন।

A N W A R

Comments

Popular posts from this blog

গুরু শিষ্য

প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যাঁর নিকট থেকে নিজের মনের অন্ধকার দূর করে আলোকিত হওয়ার জন্য ভজন বিষয়ে যা কিছু শিক্ষা করা যায় তিনিই গুরু।                                          "গুরু গোবিন্দ দোউ খড়ে,কিনকে লাগুঁ পায়,                                           বলিহারী গুরুদেব কী,গোবিন্দ দিয়ো বাতায়।।                          বিখ্যাত এ দোহাটি দিয়ে শুরু করলাম আমার গুরুশিষ্য লেখাটির প্রথম পর্ব। গুরুর চমৎকারিত্ব তখনই, যখন তিনি গোবিন্দকে পরিচিত করিয়েছেন,তাঁকে সামনে এনে দ...

সাধকের জীবন ও কর্ম (১১-২০ পর্ব)

সাধকের জীবন ও কর্ম (পর্ব:১১) -------------------------------------------- হযরত হাসান বছরী রহ: বলেন, আমি চারটি লোকের নিকট খুবই অপ্রস্তুত হয়েছি ও কিছুু শিক্ষা অর্জন করেছি।‎তাদের একজন হিজরা,দ্বিতীয়জন মাতাল, তৃতীয়জন বালক এবং চতুর্থজন একটি মহিলা। কীভাবে তা বলছি - (ক) একদা আমি একটি হিজরা (নপুংসক) লোকের পরিহিত কাপড় ধরে আকর্ষণ করায় ‎সে বলল,জনাব! আমার গোপন রহস্য বাইরে এখনো প্রকাশ পায়নি আপনি কি তা প্রকাশ করে দিতে চান? তৎক্ষণাত প্রভূর গোপন থাকার বিষয় আমার অন্তরকে প্রভাবিত করে। (খ)একদা একটি মদখোর মাতাল অবস্থায় হেলে-দুলে পথ চলছে। আমি তাকে বললাম, পথ পিচ্ছিল কিন্তু সাবধানে পা ফেল,নইলে আছাড় খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে জবাবে বলল,তুমি তোমার পা দুটোকো ঠিকভাবে ফেলে চলো। আমি তো মাতাল মানুষ, আছাড় খেলে কিন্তু ক্ষতি হবেনা। নিজের কাপড়ে ময়লা লাগলে তা ধুয়ে পরিষ্কার করে নেব। কিন্তু তুমি বড় এক আউলিয়া, তোমার শিষ্য - সাগরেদের অভাব নেই। তারা তোমার উপরেই ভর করে চলে। যদি চলার পথে তুমি কুপোকাত হও তবে তোমার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সবারই এক অবস্থা হবে। কাজেই আমার চাইতে পথ চলার ক্ষেত্রে তোমার দ্বায়িত্ব অনেক বেশী। (গ) একদা একট...

জমি সংক্রান্ত কিছু বিষয় জেনে নিন

খতিয়ানঃ মৌজা ভিত্তিক এক বা একাধিক ভূমি মালিকের ভূ-সম্পত্তির বিবরণ সহ যে ভূমি রেকর্ড জরিপকালে প্রস্ত্তত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। এতে ভূমধ্যাধিকারীর নাম ও প্রজার নাম, জ...