Skip to main content

সাধকের জীবন ও কর্ম পর্ব (১-১০)

'সাধকের জীবন ও কর্ম ( পর্ব:০১)
-------------------------------------------

বোস্তামের এক বিখ্যাত সাধক প্রায় ত্রিশ বছর বায়েজীদ বোস্তামী(রহ:) সান্নিধ্য লাভ করেন। তিনি একদিন দু:খ চিত্তে বললেন -কত এবাদত, নামাজ-রোজা করলাম মুরশীদ বায়েজীদ (রহ:) যে মারেফত শেখাচ্ছেন তা থেকে কোনও ফল লাভ করা গেলোনা। انوارحُسَين‎‎ এর কারন কী?
তখন বায়েজীদ বোস্তামী (রহ:) ত্রিশ বছর কেন তুমি যদি ত্রিশ হাজার বছরও এবাদত কর, আর তোমার স্বভাব না বদলায় তাহলে মারেফতের এক বিন্দু ঘ্রাণও তুমি পাবেনা انوارحُسَين‎‎ ।কারন তোমার জীবনকে পার্থিব পোশাক দিয়ে ঢেকে রেখেছো।

সাধক বললেন -এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি হুজুর?
উপায় আছে। তবে তুমি গ্রহণ করবে কী?
জ্বী হুজুর আপনি বলুন। انوارحُسَين‎‎
বায়েজীদ বোস্তামী (রহ:) বললেন- তবে যাও মাথা মুড়িয়ে ফেল, এই পোশাক খুলে মোটা কম্বল পড়। শহরের যে এলাকার লোক তোমাকে চেনে সেখানে গিয়ে বসে। আর কিছু আখরোট নিয়ে যাও কিছু শিশুকে ডাক দিয়ে বল যে আমাকে একটি ধাক্কা দিবে তাকে একটি আর যে দুটি ধাক্কা দিবে তাকে দুটি আখরোট দেব। انوارحُسَين‎‎ এভাবে শহরে ঘুরে ঘুরে যে এলাকায় সবচেয়ে বেশী অপমান করবে সে এলাকায়ই অবস্থান করবে।
নিজেদের সাধক অনেকেই পরিচয় দিয়ে থাকি প্রভূর স্বর্গরাজ্যে বসবাস এতো সহজ নয়। মুখে মুখে বলে আমরা সাধক সাজলেও প্রকৃত সাধক কয়জন। যেখানে বায়েজীদ বোস্তামীর জন্য প্রভূর দরজা খুলে যাওয়ার পরও হাতে একটি লোটা থাকার কারনে انوارحُسَين‎‎ সে দরজা বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে আমরা খুবই নগন্য। উপরের ঘটনার শিক্ষা পার্থিব মোহ ত্যাগ করা। আমারা যেন তা করতে পারি। আমিন। انوارحُسَين‎‎

সুবহানাল্লাহি ওয়া বেহামদিহি

-----------------সাধকদের জীবন ও কর্ম :----
                     -------পর্ব :০২-------

                             হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রহ:) অনেক উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন আল্লাহ পাকের অলী ছিলেন। হযরত আহমদ খাযরুইয়া (রহ:) স্বপ্নযোগে আল্লাহপাকের জ্যোতির সাক্ষাৎ লাভ করেন। انوارحُسَين‎‎তখন তিনি হযরত বায়েজীদ রহ: মর্যাদা সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন। আল্লাহ্ জানান তোমরা শুধু নিজেদের প্রয়োজনে কথা বল আর বায়েজীদ শুধু আমাকেই খোঁজে। তার মধ্যে অন্য কিছু নেই।

আরেকটি শিক্ষণীয় ঘটনা বলি

বায়েজীদ বোস্তামী (রহ:) একদিন বনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন পথিমধ্যে এক বৃদ্ধা মহিলার সাথে তাঁর দেখা হল। বৃদ্ধার মাথায় ছিল আটার বস্তা যা উনার বহন করে নিয়ে যেতে কষ্ট হচ্ছিল। انوارحُسَين‎‎তখন বায়েজীদ রহমাতুল্লাহ কে বললেন বস্তাটা বাড়ী পৌঁছে দিতে। সে সময়ই বন থেকে বের হয়ে এল একটা বাঘ। তিনি বাঘটিকে ডেকে তার পিঠে আটার বস্তা তুলে দিয়ে বৃদ্ধা মহিলার বাসায় দিয়ে আসতে বললেন। বাঘ রাজী হল। তখন বায়েজীদ রহ: মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন পাড়ায় বা মহল্লায় গিয়ে কি বলবেন?
বৃদ্ধা মহিলা বলল - গিয়ে বলব এক আত্মভিমানী অত্যাচারী এক লোকের সাথে আজ আমার দেখা হয়েছে।
আমি আত্মভিমানী হলাম কীভাবে?
বাঘ কখনও বোঝা বয়না, অথচ তার উপর তুমি বোঝা চাপিয়ে দিলে এটা কি বাঘের উপর জুলুম নয়? انوارحُسَين‎‎ আর পাড়ায় এ ঘটনা বললে কী তোমার অলৌকিকতা প্রচার পাবেনা?  এটাই তো তোমার মনের ইচ্ছা। এটাই আত্মভিমান।

এই বৃদ্ধা মহিলার কথা প্রায়শ:ই বলতেন এভাবে যে উনি ছিলেন আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ মূর্শিদ।

আমাদেরও সাধক বায়েজীদ বোস্তামী (রহ:) জীবন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।

সাধকের জীবন ও কর্ম - (পর্ব :০৩)
----------------------------------------------

হুসাইন মনসুর হাল্লাজ (রহ:) কমপক্ষে ৫০ টি দেশ হতে বিতাড়িত হন কারণ উনার সাধনার কথাগুলি তখন এতোই দূর্বোধ্য হতে লাগলো যে, মানুষের বোঝার ক্ষমতার বাইরে অথচ তাঁরাই মনসুর হাল্লাজ (রহ:) কে একসময় বিভিন্ন দেশে পরিভ্রমণের সময় তাঁর কথাবার্তায় মুগ্ধ হয়ে বিভিন্ন নামে ডাকতেন যেমন ভারতবাসীরা বলত আবুল মুগীস,চীনারা বলত আবুল মুঈন, খোরাসানীরা আবুল মুনীর, পারস্যবাসীরা আবু আব্দুল্লাহ যাহিদ ইত্যাদি।
তিনি একই পোশাকে বিশবছর উপাসনা করেছেন জোড় করে একবার সে পোশাক খোলার পর সেখানে অসংখ্য উকুন একেকটা উকুনের ওজন ছিল তিন রতি,একজনে পোশাকের ভেতর একটি বিছা পেয়ে মারতে গেলে নিষেধ করেন উনি বলেন -ও আমার সাথে বারও বছর।
হযরত রুশী সমর সমরকন্দি বলেন - এক বিশাল প্রান্তর অতিক্রম করার সময় চারশ জন মানুষের সকলের ক্ষুধা লাগল তারা উনার কাছে বলল রুটি ছাগল ভূণা হলে ভাল হতো। উনি বললেন সাড়িবদ্ধ হয়ে দাড়াঁতে। পেছনে হাত নিয়ে সামনে এনে প্রত্যেক কে তাই খাওয়ালেন।
খেজুর খেতে চাইলে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে বললেন আমাকে নাড়া দাও। সবাই তাই করল খেজুর গাছের মত ঝরে পড়তে লাগলো এবং পাকা খেজুর খেল সবাই।এরকম অসংখ্য কারামত তাঁর জীবনে ছিল।
সেই মনসুর হাল্লাজের ভেতর থেকে মুখে যখন প্রকাশ হল আনাল হক তখনই শুরু হল বিপত্তি
মোল্লা মৌলোভীরা শুরু করলেন ফতোয়া দেয়া। বাদশাহ্ কতল করার হুকুম দিল। শিবলী রহমাতুল্লাহ পর্যন্ত সেদিন ঢিল ছুঁড়েছিলেন।
পরের ঘটনাগুলি সবাই জানেন খুব মর্মান্তিক দজলা নদীতে পর্যন্ত আনাল হক শব্দে শিহড়িত।
যেদিন শূলে চড়ানো হল এক দরবেশ মোরাকাবায় ছিল সেদিন। তিনি গায়েবী এক আওয়াজ শুনতে পেলেন যেখানে বলা হল -"আমি আমার গোপন রহস্যাবলীর একমাত্র রহস্য মনসুর কে জানিয়ে ছিলাম কিন্তু সে জনসম্মুখে প্রকাশ করার কারণে তার এ কঠোর পরিণীতির শিকার হতে হল। কোনও শাহী রহস্য প্রকাশ হলে তাঁর পরিণতি এরুপই হয়ে থাকে।
আমরা যারা গুরুবাদীরা আছি তাঁরা লিখতে গিয়ে একটু বেসামাল হয়ে যাই। আল্লাহ পাকের গুপ্ত তত্ত্ব বা রহস্য জানা লোক ও আছেন অনেক কিন্তু সবাই তা বলেনা বা প্রকাশ করেনা কারণ যা আপনি গোপন সাধনায় জানবেন তা প্রকাশ করা হলে পরবর্তীতে  আর কোনও তত্ত্বতো আসবেই না এলহাম যোগে বরং হাশর আপনার ভয়াবহ পরিণীতি হবে। (আপনার গুরু, পীর বা মূর্শিদ সে ওয়াদা নিয়েই তা আপনাকে দান করেছেন হয়তো- বায়াতের মাধ্যমে, তা রক্ষা করি সবাই) তাই আমরা সাবধান হই। আউলিয়া কেরামের অনুসরণ করাই সবচেয়ে ভাল পন্থা। জালালুদ্দিন রুমী (রহ:) তার মসনবি তে বলেছিলেন এ কথা যে, মারেফতের বাণীগুলো ইশারায় হওয়াই ভাল, যিনি সন্ধান করবেন তিনি মারেফতের ভান্ডার হয়ে যাবেন।

রবি ঠাকুর তাঁর শেষের কবিতায় বলেছিলেন -"ভাল জিনিস অল্প হলেই তা ভাল, নয়তো নিজের ভীড়ের ঠেলায় হয়ে যেতো মাঝারি।"
সাধকের জীবন  ও কর্ম
(পর্ব :৪)
---------------------------------
তারা মনসুর হাল্লাজ (রহ:) কে তিনশো বার লাঠি পেটা করেছিল। এবং প্রতিটা আঘাতে হাল্লাজের হৃদয় থেকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল "বাবা মন্সুর ! ভয় পেওনা"পরে তাকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। তেরটি ভারি লোহার শিকল বহন করে মন্সুর হাল্লাজ খুব অহংকারের সাথে মঞ্চে হেঁটে যায় ।"বাব আল তাক" নামক মৃত্যুদণ্ডের মঞ্চে আসলো এবং কাঠের তক্তায় চুমু খেলেন ও তার অপর পা রাখলেন।তারা উপহাস করে বলল "কি মন্সুর , কেমন লাগছে ?"
হাল্লাজ: যিনি সত্য(হক) তিনি নিজে যে এই মঞ্চে উঠবেন......
তাকে প্রশ্ন করা হল "হে মন্সুর ! সুফিসম কি ?"
হাল্লাজ : যার কিছুটা(ছোট) অংশ তোমরা দেখছ।
তারা প্রশ্ন করলো "তাহলে বৃহৎ অংশটা কি ?"
হাল্লাজ : যেটা পর্যন্ত তোমরা পৌঁছাতে
পারবেনা।
অতপর তার পবিত্র হাত দুটো কেটে ফেলা হয়।হাল্লাজ হাঁসতে লাগলো এবং বলল , "একজন বন্দির হাত কেটে ফেলা খুবই সহজ বেপার । আনাল হক" খেপে গিয়ে জালেমরা তার কদম মোবারক ক্ষতবিক্ষত করলো। হাল্লাজ আবার হাসল এবং বলল , "এই পা জোড়া দিয়ে আমি জগত ভ্রমন করেছি।আমার আরেক জোড়া পা আছে যা দিয়ে আমি এখনও দোজাহান ভ্রমন করছি। যদি পার তাহলে সে পায়ে আঘাত কর দেখি" তৎক্ষণাৎ তিনি তার কাটা হাত দিয়ে তার
সারা মুখমণ্ডলে রক্ত মাখিয়ে নিলেন।জালেমরা জিজ্ঞেস করলো "এ কাজটি তুমি কেন করলে ?"
হাল্লাজ :প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমি বুঝতে পারছি আমার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। তোমরা ভাবতে পারো যে আমার মুখ ভয়ে ফ্যাকাসে হয়েছে। আমার মুখে রক্ত মেখে দিলাম যেন আমার লাল চেহারা তোমাদের চোখে ভেসে ওঠে।বীরের প্রসাধনী হচ্ছে তার নিজের রক্ত।
অতঃপর তার চোখ দুটি উপড়ে ফেলা হয়। কেউ কেউ তার জন্য কেঁদেছিলেন। অনেকেই পাথর মেরেছিলেন। তারা উদগ্রীব ছিলেন জিহ্বা কাটার জন্য।
হাল্লাজ বলল, : "একটু ধৈর্য ধর, একটু সময় দাও কথা বলার ! হে খোদা (অঝর নয়নে কাঁদলেন)!! আমাকে অত্যাচারের কারনে তাদেরকে বর্জন করোনা আমার দোহাই এমনকি তোমার রহমত থেকে বঞ্ছিত করোনা। সমস্ত প্রশংসা তোমার, আমার পা বিক্ষত করেছে কারন আমি তোমার পথে পদস্থাপন করেছিলাম।এবং যদিও তারা আমার শিরচ্ছেদ করে ক্ষমা করে দিও ওগো দয়াময়।"
তারপর তারা হাল্লাজের কান এবং নাক কেটে ফেলে। জিহ্বা কেটে ফেলার আগে হাল্লাজের শেষ কথা ছিল _
"স্রস্টাকে ভালবাসা নিজের থেকে আলাদা নয়""যারা বিশ্বাস করেনা তাহাতে , তারা দ্রুত খোঁজ করে। যারা বিশ্বাস করে তারা ধৈর্যের সাথে খোঁজ করে। জেনে রেখো এটাই সত্য।"
সঙ্গে সঙ্গে তার জিহ্বা কেটে ফেলা হয়
এবং মাগরেব নামাজের সময় তার শিরচ্ছেদ করা হয় (ইন্নালিল্লাহে ...) তার গর্দান কাটার সময়ও হাল্লাজ হাসি মুখে ছিলেন।অতঃপর আল্লাহর খেলা শুরু হল। চারিদিক থেকে আওয়াজ ভেসে আসতে লাগলো, রক্তের কণাগুলো "আনাল হক , আনাল হক" জিকির করতে লাগলো যা ছিল অনেক বেশি প্রকট। উজির খলিফা সবাই ঘাবড়ে গেলেন এবং তারা সঙ্গে সঙ্গে তার দেহ এবং রক্ত পুড়িয়ে দিলেন কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। অবশেষে শেষ উপায় বলতে জালেমরা ছাইগুলো তিগ্রিস নামক বাগদাদের সেই নদীতে নিক্ষেপ করলেন রক্ষা পাওয়ার জন্য।কিন্তু আল্লাহর গজব কি মানুষের পক্ষে সামলানো সহজ?
এতেই বোঝা যায় তারা কত বড় নাফরমান কাফের ছিলেন। বাগদাদ শহর প্লাবিত হতে লাগলো যেন কেয়ামত হয়ে যাচ্ছিল ।এবং প্রতিটি পানির ফোটা যেন জিকির করতে ছিল "আনাল হক …আনাল হক …আনাল হক" হযরত মন্সুর হাল্লাজ (র) বলেছিলেন"আনাল হক" অর্থাৎ "আমি সত্য"। সত্যি তিনি যে মহান তার প্রমান দিয়ে গেছেন অসংখ্যবার যা দুনিয়ার বুকে বিরল। হাল্লাজ জিবিত থাকতেই একদিন তার এক ভক্তকে বলেছিলেন এই দিনের আগাম ভবিষ্যৎ । এবং এর থেকে পরিত্রাণ এর উপায় ও বলে গিয়াছিলেন।
অতঃপর তার সেই মুরিদ খলিফা কে জানালেন এবং হাল্লাজের কথা মত হাল্লাজের পরিধানের বস্ত্র নদিতে রাখলেন এবং সেই বাগদাদ জাতি আল্লাহর গজব থেকে পরিত্রাণ পেলেন।
২৮ মার্চ ৯১৩ খ্রিস্টাব্দে জগত শ্রেষ্ঠ আল্লাহর বন্ধু হযরত মন্সুর আল হাল্লাজ (রঃ) শহীদ হন।

সাধকের জীবন ও কর্ম (পর্ব: ০৫)
---------------------------------------------

হযরতে খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রহ:) ৮৯ বছর এই জগতের ধূলায় থেকে রুহানী জগতের প্রাণ বন্যার জোয়ার এনেছিলেন। তিনি রাসূলপাকের প্রতি অত্যন্ত অনুরক্ত ছিলেন। দিবারাতি আল্লাহ বাসূলের ধ্যাণেই মগ্ন থাকতেন। এমন কোন জ্ঞানের শাখা ছিলনা যা উনার নখদর্পণে ছিলনা। তিনি ইলমে জাহেরের সাথে সাথে ইলমে বাতেনের প্রতিও আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলেন। তিনি মনে করেছিলেন কিতাবী জ্ঞান কেমন যেন অপূর্ণ রয়ে গেল। জাহেরীভাবে ধর্ম পুরোপুরি লাভ হয়না। তাই আধ্যাত্ম সাধনায় গভীর মনোযোগের সাথে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি মূর্শিদের দরবারে কামালিয়াত হাসিলের বিশেষ সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি যে দরবারে ছিলেন তা ছিল সেকালের বিখ্যাত দরবার- ফরিদউদ্দিন গন্জেশকর রহ: দরবার। সেখানে আউলিয়া কেরামদের আনাগোনা থাকত তারাও দরবারের কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করতেন।
একদিন বাজারের দ্বায়িত্ব পড়ল নিজামউদ্দিন (রহ:) এর উপর তাঁর কাছে লবন কেনার পয়সা ছিলনা। তিনি ভাবলেন লবন ছাড়াতো কোনক্রমেই খাওয়া যাবেনা সেজন্য তিনি অপর এক পীর ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু সামান্য পয়সা ধার করে লবন খরিদ করে তরকারী পাক করলেন। হযরত ফরিদউদ্দিন গন্জেশকর (রহ:) এর সামনে পরিবেশন করলেন। যদিও উক্ত ঘটনা উনার অগোচরেই সংঘটিত হয়েছিল। ফরিদউদ্দিন গন্জেশকর (রহ:) এর সামনে খাদ্য পরিবেশন করা মাত্রই তিনি বলে উঠলেন -"খাবার দেখে দেখতে পারলাম যে, এ খাবারে অপচয়ের গন্ধ মিশে আছে। এই তরকারীতে ব্যাবহৃত লবন কোথা হতে সংগ্রহ করা হয়েছে? "
নিজামউদ্দিন রহমাতুল্লাহ বিপাকে পড়ে গেলেন তিনি বিনীতভাবে বললেন - হুজুর লঙ্গরখানায় লবন ছিলনা এমনকি আমার কাছেও পয়সা কড়ি ছিলনা তাই ধার নিয়ে লবন কিনে তরকারী পাক করেছিলাম যাতে আপনি খেতে পারেন।
হুজুর বললেন এ তরকারী খাওয়া যাবেনা বরং এর চেয়ে মৃত্যূবরণ করাটাই শ্রেয়। এ খাবারগুলো গরীব মিসকীনদের মাঝে বিলীয়ে দাও।
নিজামউদ্দিন রহ: তাই করলেন এবং তওবা কররেন এ কাজ আর জীবনে করবেন না।
পীর কেবলা খুশী হয়ে স্বীয় কম্বলখানি তাঁকে দান করলেন।
প্রিয় বন্ধুরা লক্ষ্য করুন এখানে সামান্যমাত্র ধারকে কত বড় অপচয় মনে করে আউলিয়া কেরামগণ বর্জন করলেন খাবার। অথচ আমরা শুধু ধারই না সমিতি থেকে সুদে টাকা এনে বিভিন্ন উৎসব আয়োজন করে বড়ত্ব বা অহংকার করে থাকি যা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। জায়েজ আছে বিপদে পড়লে ধার নেয়া কিন্তু পরিশুদ্ধ অর্জনের ক্ষেত্রে তাসাউফের শিক্ষায় তাইতো খাজা বাবা বলেন- "যথাসম্ভব পারো ধার থেকে দূরে থাকো এতে ঈজ্জত কমে যায়।"
{চলবে.......... পরবর্তী পর্বে চেষ্টা করব অনিষ্ঠের মূল কারণ নিয়ে সাধকের জীবন ও কর্ম ৬ষ্ঠ পর্ব লেখার। }

সাধকের জীবন ও কর্ম (পর্ব: ০৬)
---------------------------------------------
খাজা নিজামউদ্দিন রহ: বলেন অনিষ্ঠের মূল কারণ সমূহ:-
এ বিশ্বভ্রহ্মান্ডের মাঝে মানব দেহের যে সকল ইন্দ্রিয় রয়েছে তন্মধ্যে ছয়টি ইন্দ্রিয় খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে, ইন্দ্রীয়গুলো হচ্ছে :(১)চোখের দৃষ্টিশক্তি (২) কানে শ্রবণ শক্তি (৩)নাকের ঘ্রাণ শক্তি (৪) জিহ্বার আস্বাদন শক্তি (৫) ত্বকের স্পর্শ শক্তি ও (৬) দেহের জৈবিক তাড়না শক্তি।উক্ত ছয়টি শক্তি হতে যে সকল কুরিপু মানুষের মাঝে আত্মপ্রকাশ করে তা হলো: কাম,ক্রোধ,মোহ,লোভ,মাৎসর্য।এ রিপুগুলো যখন কোনও মানুষের মাঝে শাখা প্রশাখা ও পত্র পল্লবে পরিব্যাপ্ত হয়ে উঠে, তখন তার স্বাভাবিক মানবীয় গুণাবলী লোপ পায় এবং সে ক্রমে ক্রমে পশু স্বভাব ধারণ করে। কঠোর সাধনার মাধ্যমে এ কুরিপুগুলিকে অবদমিত করে তুলতে পারে। নইলে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দেয়া মোটেও বিচিত্র নয়।
এ দেহ রাজ্যেকে শাসন করার জন্য ভূমির মতই কোন নেতা বা উছিলা ছাড়া সম্ভব নয়। প্রতিটি মানুষের জন্য আবাসভূমি দরকার এবং ভূখন্ডের শান্তি শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য একজন সুদক্ষ রাজা বা প্রশাসক থাকা একান্ত অপরিহার্য। তা নাহলে রাজ্যে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি দেখা দেয়া স্বাভাবিক।
আধ্যাত্মিক ভাষায় রাজ্য বলতে এখানে বুঝায় দেহকে এবং মন হল তার রাজা বা প্রশাসক। তাই দেহ রাজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মনকে কঠোর সাধনা এবং সংযমের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এবং এটাকেই বলে জেহাদে আকবর।
খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়া তাই মনকে বশে আনার জন্য ব্যাপক তাগিদ দিতেন এবং তার শিষ্যদের কে সে পথে চলতে বলতেন।
শুধু তাই নয় মৃত্যুর যন্ত্রণা যখন তাকে ঘিরে ধরেছিল তখন সুলতান তুঘলক শাহ এবং গুণগ্রাহী সকলেই তাঁর চিকিৎসার জন্য অধীর হয়ে উঠেন কিন্তু খাজা নিজামউদ্দিন সাধনার মাধ্যমে জিকিরে নিমগ্ন হয়ে সুস্থতা বোধ করতেন। তাঁর তীক্ষ্ণ ধ্যাণ শক্তি তাঁকে মনজিলে মকছুদে পৌঁছে দিয়েছিল।
বন্ধুরা আমাদের আল্লাহপাকের মহান অলীদের অনুসরনই সকল প্রকার অনিষ্ঠ হতে আমাদের মুক্ত রাখতে পারবে। মনে রাখবেন আল্লাহকে পাওয়া খুব কঠিন, অথচ আবার একেবারেই সোজা।(খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়া র:)।

সাধকের জীবন ও কর্ম (পর্ব:০৭)
---------------------------------------------
একদিন ফরিদউদ্দিন আত্তার (রহ:)তাঁর দোকানে তিনি কর্মব্যস্ত। এক ভিক্ষুক এসে দোকানে ভিক্ষা প্রার্থণা করেন। ব্যাস্ততার কারনে তিনি তাঁর দিকে তাকাতে পারলেন না। ভিক্ষুক এবার জোড়ে দ্বিতীয়বার ভিক্ষার দাবী জানায়। কিন্তু তাতেও ফল হলোনা। তখন হতাশ হয়ে ভিক্ষুক বললেন, সামান্য পয়সা খরচ করতে তুমি এতো কুন্ঠিত। না জানি প্রিয় প্রাণটা দেওয়ার ব্যাপারে তুমি কিরুপ কর।
ভিক্ষুকের কথাটি এবার কানে যায় ফরিদউদ্দিনের বিরক্ত হয়ে বলল তুমি যেভাবে প্রাণ দিবে, আমি তেমন ভাবেই দিব?  বটে! ভিক্ষুক বলল আমি যেভাবে দিব তুমি সেভাবেই দিবে?  দেখা যাক, তৎক্ষণাৎ তাঁর কাঁধের ঝুলি মাথার নিচে দিয়ে মাটির উপর শুয়ে পড়ে বারবার কালেমা তাইয়্যেবা পড়তে পড়তে মারা যায়।
এ ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেলেন ফরীদউদ্দীন আত্তার রহ:। এর পরে সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে মারেফত জ্ঞানে দীক্ষিত হন। আর উচ্চ তত্ত্ব জ্ঞানের অধিকারী হন।
ফরিদউদ্দিন আত্তার রহ: প্রথম বলেছিলেন হুদহুদ পাখী তত্ত্ব জ্ঞানী পাখী। তাঁর রচিত অসংখ্য কিতাবাদির মধ্যে লিসানুল হাক্বীকত এখন ও লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সুরক্ষিত আছে।

সাধকের জীবন ও কর্ম (পর্ব: ০৮)
------------------------------

সিরাজুল হক কানু সাধকের ভীড়ে গুপ্ত এক নাম যিনি জীবিত অবস্থায় কখনও কারও নিকট প্রকাশ করেনি নিজেকে। যাকে আমি স্বচক্ষে দেখেছি বিভিন্ন দরবারে তার সাথে চলাফেরা করে। উনার স্ত্রী একদিন রাতের বেলা গুণগুণ শব্দ শুনে ঘুম থেকে জেগে উঠেন ভয়ে উনি নড়াচড়া করেন না নতুন বঁধূ।চুপিসারে উনি দেখতে পান দুজন সাদাপাঞ্জাবী সাদা দাড়িওয়ালা লোক স্বামীর মাথার কাছে কোরআন তেলাওয়াত করছে। ভয়ে উনি না উঠে পরের দিন ফুপুকে এ কথা বললেন। ফুপু বললেন ঠিকআছে আজ রাতে তুই আমার কাছে শুবি। সাধক কানু তো আজও ঘুমে সেই গুণ গুণ শব্দ। আজ ফুপু সহ স্ত্রী উঠে তাই দেখলেন। ﺍﻧﻮﺍﺭﺣُﺴَﻴﻦ পরের দিন দুজনই সাধককে বললেন। সাধক স্ত্রীকে বললেন ভয় পেওনা উনাদের দুজনই অলী। উনারা আমাকে ভালবাসেন।উনার স্ত্রী একবার উনাদের চলে যাওয়ার মূহুর্তে বলে বাবা দাঁড়ান। উনারা আজ অদৃশ্য হলেন না। বললেন কি চাও? বাবা আপনারা কারা? উনারা বললেন জেনে কি হবে, কি চাও বল মা। তখন উনার স্ত্রী একজন নেক সন্তান চাইলেন। ﺍﻧﻮﺍﺭﺣُﺴَﻴﻦ বললেন যা তোকে অমূল্য ধন দিলাম।উনার স্ত্রী কদমবুসি ও করলেন তাদের। পরবর্তীতে একজনকে চিনতে পেরেছিলেন সাধকের পীর সাহেব ছিলেন স্বয়ং।অন্যজনকে চিনতে পারেনি।
অথচ বাস্তবে সাধক উনি মানুষকে ভুলিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন কর্ম করেন যা অলীতো দূরের কথা পাগলই বলবেন সবাই।পাগল মাস্তানদের সাথে উঠাবসা। আমি দেখতাম খাওয়ার সময় খাবার হাত নিয়ে হাত উঠিয়ে বলতেন ও মূর্শিদ দয়া করো, আর কি যেন বলতেন। গুরুবাদী যারা তারা এমনটা করে থাকেন। মাঝে মাঝে দম করতে দেখতাম। আমি ছোট শিখতে পারিনি তাঁর কাছে। ইনা পাগলা র সাথে ভাল যোগাযোগ ছালেহ বাবা ইয়েমেনী মাজারে পড়ে থাকতেন প্রায়। বাংলাদেশ ভারত সহ বিভিন্ন দরবারে যাতায়াত ছিল তাঁর।
কখনও কারও কাছে ধার নিতেন না। বলতেন খাজা বাবার নিষেধ আছে।
২০১৬ সাল তার পীর সাহেব আবেদ শাহ্ আল মাদানী রহ: এর খানকায় সাজ্জাদানশীন পীর সাহেব সৈয়দ বাহাদুর শাহ্ হুজুর কেবলাকে বলছে " বাবা আমিতো আগামী বছর থাকব না তাই এ মাসের মাসিক জলসায় খানকায় আগমনকারী সমস্ত পীর ভাইদের কে নেওয়াজ আমার পক্ষ থেকে খাওয়াব। ﺍﻧﻮﺍﺭﺣُﺴَﻴﻦ
অনেকে বললেন কি বলেন ভাই মৃত্যর খবর কেউ কি জানতে পারে? তিনি বললেন -হ্যাঁ ভাই আগামী বছর থাকবনা।
তাই করলেন। সবাইকে এক/দুই ডেগ খিচূড়ী রান্না করে খাওয়ালেন। ঠিক একবছর সে ফাতেহা দোয়াজদহম উনি আর ছিলেন না। এর পূর্বেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। ﺍﻧﻮﺍﺭﺣُﺴَﻴﻦ
উনি যা বলতেন দেখা যেত প্রায় সবি ফলে যেত।
তবে উনার মৃত্যর পর উনার অনেক গুণগ্রাহী ছিলেন তারা বিভিন্নভাবে উনাকে দেখেছেন। কেউ বলেছেন উনাকে দেখেছি কাবা শরীফে হজ্ব করতে এসেছেন। কেউ বলেছেন উনার সাথে কাবা শরীফে ইফতার করেছেন। ﺍﻧﻮﺍﺭﺣُﺴَﻴﻦ
উনার মৃত্যূর সময় উপস্থিত হলে প্রিয় ছেলেকে মিস করেছিলেন খুব। অবাকের বিষয় হল। উনার বোনদের উপস্থিতিতে হাসপাতালের বেডের কাছে উনার পীর সাহেব মৃত্যুর কষ্ট দূর করার জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন। ﺍﻧﻮﺍﺭﺣُﺴَﻴﻦ অথচ তিনি বহু আগেই দুনিয়া থেকে পর্দা নিয়েছিলেন।
এ ঘটনার স্বাক্ষী উনার বোনেরা স্বয়ং। সেদিন উনার বোনেরাও পীর সাহেবের প্রশংসা আজও করেন।
তাই কে কখন অলী হয়ে নিজের হাশর ঠিক করে ফানাফিল্লাহ বাকাবিল্লায় পৌঁছে যাব আমরা তা এ ধরনের সাধকদের মত কেউ টেরও পাবনা।

সাধকের জীবন ও কর্ম -(পর্ব:০৯)
------------------------------
---------------
খোরাসানের এক কামার। দারুণ আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন এক রুপসী যুবতী নারীর। তাকে না পেলে কামার বুঝি মারাই যাবে ﺍﻧﻮﺍﺭﺣُﺴَﻴﻦএম
ন অবস্থা। ছুটলেন নিশাপুরের এক ইহুদী জাদুকরের কাছে। প্রেমিকাকে তার পেতেই হবে। জাদুকর বলল - তাকে পাওয়া যাবে তবে একটা শর্ত আছে। তা হল, একাধারে চল্লিশ দিন কামার কোনও রকমের এবাদত করতে পারবেনা।
এ আর এমন কী কঠিন কাজ! কামার রাজী হয়ে গেল। প্রেমিকার জন্য তিনি সর্বস্ব ত্যাগ করতে প্রস্তুত। বন্ধ হয়ে গেল তার এবাদত। এভাবে চল্লিশ দিন পার হওয়ার পর কামার জাদুকরের নিকট গেলেন। ﺍﻧﻮﺍﺭﺣُﺴَﻴﻦকি
ন্তু জাদুকর তার উপর জাদু প্রয়োগ করে বিন্দুমাত্র ফল পেলনা। কারণ কি? জাদুকর সন্দেহ করল, ঐ চল্লিশ দিনের মধ্যে নিশ্চয়ই কোনও সৎ কাজ করেছেন।
কামার ভেবে দেখলেন তেমন কোনও কাজ তিনি করেন নি। অত:পর মনে পড়ল পথ চলতে চলতে একদিন পথের উপর পড়ে থাকা কিছু পাথর পা দিয়ে সড়িয়ে দিয়েছিলেন ﺍﻧﻮﺍﺭﺣُﺴَﻴﻦএই ভেবে যে, হয়তোবা কোনও পথচারীর পা ফসকে যেতে পারে।
এমন ঘটনা দেখে তারঁ হৃদয়ে ভাবোদয় হল যে এত ছোট একটা কর্মের এতো বড় ফায়দা! প্রতিজ্ঞা করলেন জীবনে আর কোনদিন কুকাজে লিপ্ত হবোনা। ﺍﻧﻮﺍﺭﺣُﺴَﻴﻦ
শুরু হল তাঁর প্রতিশ্রুত জীবন। রোজগার করে যা পান তা দান করে দেন। মানুষের ফেলে দেয়া শাকপাতা সংগ্রহ করে রান্না করে খান।
এ কর্মকার বা গোপন সিদ্ধ পুরুষের নাম আবু হাফস হাদ্দাম খোরাসানী (রহ:)। ﺍﻧﻮﺍﺭﺣُﺴَﻴﻦ
আমাদের প্রত্যেকের উচিত অন্যের পিছনে লেগে না থেকে মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা।নিজেদের আশেপাশের পরিবেশটা আমাদেরই সুন্দর করে তুলতে হবে নি:শ্বার্থ ভাবে। তবেই প্রভূর নিকট আত্মসমর্পণে কোনও ভয় থাকবে না। সাধক আবু হাফস রহ: প্রভূর কাছে নিজেকে সমর্পণের একটি পথ বলে যান। ﺍﻧﻮﺍﺭﺣُﺴَﻴﻦ
তা হল -
"নিজের মন যে আল্লাহকে সমর্পণ করতে চায়,তাঁর উচিত দরবেশ- তাপসদের সহচর্য অবলম্বণ করা।

সাধকের জীবন ও কর্ম (পর্ব:১০)
---------------------------------------------
হযরত জুনায়েদ বোগদাদী এক শিষ্যকে বড় ভালবাসতেন। তা দেখে অন্য শিষ্যদের মনে হিংসা জন্মে। আর সেটি হযরতের নজর এড়িয়ে গেলনা। একদিন তিনি প্রত্যেক শিষ্যকে একটি করে মোরগ আর ছুরি দিয়ে বললেন, তোমরা প্রত্যেকে এমন انوارحُسَين‎‎ যায়গায় গিয়ে এগুলি জবেহ করে আন, যেন কেউ সেখানে জবাই করতে দেখতে না পায়। সবাই তাই করলেন। কিন্তু স্নেহভাজন শিষ্যটি মোরগ জবাই না করে ফিরে এলেন। কারন জিজ্ঞাস করলে তিনি বলেন, আমি এমন যায়গা খুঁজে পেলাম না যেখানে আপনার নির্দেশ মত মোরগ জবাই করতে পারি। انوارحُسَين‎‎ কেননা আল্লাহপাকের দৃষ্টি সর্বত্রই তাঁকে এড়িয়ে কোন স্থানেই মোরগ জবাই করা সম্ভব নয়। তাঁর কথা শুনে সবাই তাদের অজ্ঞতা বুঝতে পারলেন। সেদিন থেকে তারা তওবা করল হিংসা বিদ্বেষের অবসান ঘটল। انوارحُسَين‎‎
★শিক্ষা :- গুরুই জানেন তাঁর কোন ভক্ত কতটুকু এগিয়ে। কাকে কতটুকু দেয়া লাগে। তাই অন্যের দিকে নজর না করে নিজের দিকে খেয়াল করা উচিত। উপরে সবাই জানত আল্লাহর দৃষ্টি সর্বত্র কিন্তু তারা প্রভূর স্মরণ করতে ভুলে গিয়েছিল। انوارحُسَين‎‎আরেকটি ঘটনা যা আমাদের গুরু ভক্তদের জন্য শিক্ষণীয় :-
একবার জুনায়েদ বোগদাদী রহ: এর এক শিষ্যের মনে হল যে,সে সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছে অতএব পীরের সান্নিধ্যের বা সংস্পর্শের আর প্রয়োজন নেই। এখন নির্জনবাসই শ্রেয়। অতএব শুরু হল তার নির্জন বাস। আর প্রতিরাতে স্বপ্ন দেখতে انوارحُسَين‎‎ লাগল 'ফেরেশতারা সঙ্গে একটি উট নিয়ে এসে তাকে বলছে, চল তোমাকে নিয়ে জান্নাতে যাব। একদিন উটের উপর চড়ে ফেরেশতারা তাকে জান্নাত নিয়ে গেল যেখানে সুদর্শন লোকের انوارحُسَين‎‎ সমাবেশ, উত্তম আহার্য,কাছেই স্বচ্ছ পানির ফোয়ারা ইত্যাদি স্বপ্নে দেখতে লাগল। বেশ কিছুদিন এভাবে চলতে লাগল এবং মানুষের কাছে বলতে লাগল রোজ রাতেই সে একবার জান্নাতে যায়। অবশেষে হযরত জুনায়েদ রহ: এর কাছে কথাটি চলে আসে। তিনি একদিন চলে গেলেন তাঁর শিষ্যের বাড়ীতে। গিয়ে দেখলেন কয়েকজন অনুচর নিয়ে জমকালো ভাবে সে বসে আছে। তার কাছে স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে সুবিস্তারে ঘটনাটি বলল। জুনায়েদ রহ: বলল - আজ রাতেও যখন স্বপ্ন দেখবে তখন তোমার জান্নাতে উপস্থিত হয়ে তুমি 'লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ ' কালেমাটি ৩ বার বলবে। انوارحُسَين‎‎
সে তাই করল সে  জান্নাতে পৌঁছে কালেমাটি তিনবার পাঠ করার সাথে সাথে দেখল-সে জান্নাত ভেঙ্গে গেল,তাকে একা ফেলে রেখে কে কোথায় ছুটে পালাল, এবার দেখল সে انوارحُسَين‎‎একটি বিদঘুটে ঘোড়ায় চড়ে অতি বিশ্রী একটা যায়গায় পৌঁছে গিয়েছে সেখানে পড়ে আছে মৃত পশুর দুর্গন্ধ ভরা কয়েকখানি হাড়।
তখন সে তাঁর ভুল বুঝতে পেরে অস্থির হয়ে انوارحُسَين‎‎ উঠল।ঘুম থেকে উঠেই মূর্শিদের বাড়ী গেল।  এখন সে উপলব্ধি করল, পীরকে পরিত্যাগ করে মুরীদের পক্ষে নির্জনবাস বড় বিপজ্জনক। انوارحُسَين‎‎
★ আমাদের মাঝে অনেকেই আছে বিভিন্ন স্বপ্ন দেখে তাকে বাস্তবে ভাবা শুরু করি। কাউকে দেখে নিজের কৃষ্ণ ভাবতে থাকি। তাই তাদের উচিত মূর্শিদের কষ্টি পাথরে যাচাই না করে কোনও কিছু নির্ণয় করা উপরের ঘটনার মত বিপজ্জনক।

انوارحُسَين‎‎
written by Md Anwar Hossain

Comments

Popular posts from this blog

গুরু শিষ্য

প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যাঁর নিকট থেকে নিজের মনের অন্ধকার দূর করে আলোকিত হওয়ার জন্য ভজন বিষয়ে যা কিছু শিক্ষা করা যায় তিনিই গুরু।                                          "গুরু গোবিন্দ দোউ খড়ে,কিনকে লাগুঁ পায়,                                           বলিহারী গুরুদেব কী,গোবিন্দ দিয়ো বাতায়।।                          বিখ্যাত এ দোহাটি দিয়ে শুরু করলাম আমার গুরুশিষ্য লেখাটির প্রথম পর্ব। গুরুর চমৎকারিত্ব তখনই, যখন তিনি গোবিন্দকে পরিচিত করিয়েছেন,তাঁকে সামনে এনে দ...

সাধকের জীবন ও কর্ম (১১-২০ পর্ব)

সাধকের জীবন ও কর্ম (পর্ব:১১) -------------------------------------------- হযরত হাসান বছরী রহ: বলেন, আমি চারটি লোকের নিকট খুবই অপ্রস্তুত হয়েছি ও কিছুু শিক্ষা অর্জন করেছি।‎তাদের একজন হিজরা,দ্বিতীয়জন মাতাল, তৃতীয়জন বালক এবং চতুর্থজন একটি মহিলা। কীভাবে তা বলছি - (ক) একদা আমি একটি হিজরা (নপুংসক) লোকের পরিহিত কাপড় ধরে আকর্ষণ করায় ‎সে বলল,জনাব! আমার গোপন রহস্য বাইরে এখনো প্রকাশ পায়নি আপনি কি তা প্রকাশ করে দিতে চান? তৎক্ষণাত প্রভূর গোপন থাকার বিষয় আমার অন্তরকে প্রভাবিত করে। (খ)একদা একটি মদখোর মাতাল অবস্থায় হেলে-দুলে পথ চলছে। আমি তাকে বললাম, পথ পিচ্ছিল কিন্তু সাবধানে পা ফেল,নইলে আছাড় খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে জবাবে বলল,তুমি তোমার পা দুটোকো ঠিকভাবে ফেলে চলো। আমি তো মাতাল মানুষ, আছাড় খেলে কিন্তু ক্ষতি হবেনা। নিজের কাপড়ে ময়লা লাগলে তা ধুয়ে পরিষ্কার করে নেব। কিন্তু তুমি বড় এক আউলিয়া, তোমার শিষ্য - সাগরেদের অভাব নেই। তারা তোমার উপরেই ভর করে চলে। যদি চলার পথে তুমি কুপোকাত হও তবে তোমার সঙ্গে সঙ্গে তাদের সবারই এক অবস্থা হবে। কাজেই আমার চাইতে পথ চলার ক্ষেত্রে তোমার দ্বায়িত্ব অনেক বেশী। (গ) একদা একট...

জমি সংক্রান্ত কিছু বিষয় জেনে নিন

খতিয়ানঃ মৌজা ভিত্তিক এক বা একাধিক ভূমি মালিকের ভূ-সম্পত্তির বিবরণ সহ যে ভূমি রেকর্ড জরিপকালে প্রস্ত্তত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। এতে ভূমধ্যাধিকারীর নাম ও প্রজার নাম, জ...